(পুরস্কার ঘোষণার আগেই শীর্ষ সন্ত্রাসীর কেউ কেউ গ্রেফতার এড়াতে পালিয়ে যান ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। কেউ কেউ আবার পুরস্কার ঘোষণার পর দেশত্যাগ করেন। এদের একটি বড় অংশ আশ্রয় নিয়েছে ভারতের কলকাতা সহ বিশ্বের অনেক দেশে। সেখান থেকে টেলিফোনে শুরু করে সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি, কন্ট্রোল করে কিশোর গ্যাং।)
শের ই গুল :
বর্তমান সরকার সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিলে চাঁদাবাজি সহ অনেক অপরাধ কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসলেও শীর্ষ সন্ত্রাসীরা তাদের রুট পরিবর্তন করে দেশব্যাপী কিশোরগ্যাং সৃষ্টি করে মাদক দিয়ে দেশ সয়লাব করে নতুন করে মাথা চাড়া দিয়ে উঠার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশের আন্ডারওয়ার্ল্ডের ‘ডেঞ্জারাসম্যান’ শীর্ষ সন্ত্রাসীরা বিদেশে অবস্থান করে কন্ট্রোল করছে বাংলাদেশের চাঁদাবাজির বাজার।
ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের এক সময়ের ডনেরা এখন তাদের অবস্থান ভারত, দুবাই, ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস সহ বিভিন্ন দেশে। সুদূর বিদেশে বসেই তারা ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের কলকাঠি নাড়ছেন। এমনকি বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠানের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে জানা যায়। এদের মধ্যে কেউ কেউ বয়সের কারণে মুড়িয়ে গেলেও তাদের সম্রাজ্য চালাচ্ছে তাদের তৈরি সান্ডাপান্ডারা। দেশে জেলে থাকতেও তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল চাঁদাবাজির বাজার। তাদের নির্দেশে ঢাকায় কোটি টাকা চাঁদা উঠছে আর ওই টাকা চলে যাচ্ছে বিদেশে। ঢাকা থেকে তোলা চাঁদার টাকায় দেশের বাহিরে আলিশান জীবনযাপন করছেন তারা।
বিদেশে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী বাংলাদেশের আন্ডারওয়ার্ল্ডের ‘ডেঞ্জারাসম্যান’ সন্ত্রাসী বিকাশ কুমার বিশ্বাস, পিচ্ছি হান্নান, কালা জাহাঙ্গীর, সুব্রত বাইন, জোসেফ এদের মধ্যে এখন পর্যন্ত শাহাদাত বাহিনী মিরপুরে ভীষণভাবে সক্রিয় আছে বলে জানা যায়। শাহাদাতের নির্দেশে ঢাকার বিভিন্ন মার্কেট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা উঠছে। সেই টাকা যাচ্ছে কলকাতায়। দেশের চাঁদায় শাহাদাত ভারতে ব্যয়বহুল জীবন কাটাচ্ছেন।
রাজধানীর উত্তরা, মিরপুর সহ সব এলাকায় এখন গড়ে উঠেছে কিশোরগ্যাং। এসব কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা বড় ভাই নামক শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণে থেকে অভিনব কায়দায় চালাচ্ছে চাঁদাবাজি। এসব উঠতি বয়সি কিশোর গ্যাং সদস্যদের নিয়ন্ত্রণে চলছে মাদক স্পট সহ স্পা, ম্যাসেজ পার্লার ও অসামাজিক কার্যকলাপের বাসা বাড়ী এবং আবাসিক হোটেল। এখান থেকেও আসা টাকা চলে যায় জেলে থাকা বড় ভাই ও বিদেশে থাকা শীর্ষ সন্ত্রাসীদের হাতে। এভাবেই বিদেশে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নামে প্রতি মাসে দেশে মোটা অঙ্কের চাঁদা উঠছে। সেই টাকা হুন্ডি ও অন্যান্য মাধ্যমে তাদের কাছে যাচ্ছে। এই টাকাতেই চলছে তাদের বিলাসী জীবনযাপন।
আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের রেড নোটিসের হুলিয়া মাথায় নিয়েই দাগী অপরাধীদের কেউ কেউ বিদেশে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকও বনে গেছেন। কেউ কেউ বাড়ি কিনেছেন। চলেন দামি গাড়িতে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে নিজেরা আয়েশি জীবনযাপন করছেন। বিদেশে নিরাপদে থেকে নিয়ন্ত্রণ করছেন ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘ধরিয়ে দিলে পুরস্কৃত করা হবে’ ঘোষণার তালিকাভুক্ত ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর কয়েকজন র্যাব-পুুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে দেশে কারাবন্দী। তালিকার বেশির ভাগই গ্রেফতার এড়াতে ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, দুবাই, সুইজারল্যান্ডসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। কেউ কেউ আবার প্রতিবেশী দেশ ভারতে গ্রেফতার হয়ে সেখানে কারাবাস করছেন।
বিদেশে পলাতক বেশির ভাগ শীর্ষসন্ত্রাসী ঢাকা থেকে যাওয়া চাঁদাবাজি আর নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের টাকায় বিলাসী জীবনযাপন করছেন বলে পুলিশ ও গোয়েন্দাদের কাছে খবর রয়েছে। ভারতে পলাতক শাহাদাত হোসেনের সন্ত্রাসীরা বেশ কয়েক মাস আগে পল্লবী এলাকার মেসার্স লক্ষ্মীপুর বাণিজ্যালয়ে আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে প্রতিষ্ঠানটির মালিক রফিকুল ইসলাম ও তার ভাই ইসমাইল হোসেনকে জিম্মি করে। তারা সাড়ে নয় লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। পরে নিরুপায় হয়ে সন্ত্রাসীদের ৫০ হাজার টাকা দেন ওই দুই ভাই। ওই দিন তারা চলে গেলেও এক সপ্তাহের মধ্যে দাবিকৃত সাড়ে নয় লাখ টাকা পরিশোধ করার জন্য ব্যবসায়ী রফিককে সময় বেঁধে দেন। মোবাইল ফোনে বিভিন্ন সময় হুমকি দিয়ে তারা বলেন, পল্লবীর ওষুধ ব্যবসায়ী জাহিদুল ইসলাম রাসেলকে হত্যা করা হয়েছে। চাঁদা না দিলে জাহিদুলের মতোই হত্যা করা হবে বলে দুই ভাইকে হুমকি দেন তারা। পরে রফিকুল ও ইসমাইল র্যাবের কাছে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে একটি অভিযোগ করলে র্যাব সদস্যরা বিষয়টি তদন্তে নামেন। পরে ওই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সাড়ে নয় লাখ টাকা চাঁদা আদায়কালে র্যাবের হাতে ধরা পড়ে শাহাদাত বাহিনীর ছয় সন্ত্রাসী। গ্রেফতারের পর ওই ছয় সন্ত্রাসী র্যাবকে জানায়, চাঁদাবাজি করে অর্জিত টাকা বিদেশে শাহাদাতের কাছে পাঠানোর কথা ছিল। পল্লবীর চাঁদাবাজির ঘটনায় ব্যবসায়ী দুই ভাই সাহস করে র্যাবকে জানালেও বেশির ভাগ চাঁদাবাজির ঘটনা র্যাব-পুলিশ পর্যন্ত পৌঁছায় না। প্রাণভয়ে চাঁদার টাকা দিয়ে দেন। এভাবেই বিদেশে বসে নীরবে চাঁদাবাজি করছে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসীরা।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকাতেই বিদেশে পলাতক ও কারাবন্দী শীর্ষ সন্ত্রাসীরা টেলিফোনে চাঁদাবাজি করছেন। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর রাজধানীতে সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি মারাত্মক আকার ধারণ করে। তখন সরকার ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মধ্যে ২৩ জনকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করে। পুরস্কার ঘোষণার আগেই তালিতাভুক্ত ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর কেউ কেউ গ্রেফতার এড়াতে পালিয়ে যান ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।
কেউ কেউ আবার পুরস্কার ঘোষণার পর দেশত্যাগ করেন। এদের একটি বড় অংশ কলকাতায় আশ্রয় নেন। সেখান থেকে টেলিফোনে শুরু করে সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি। সূত্র জানায়, ২০১২ সালের ১৪ ডিসেম্বর কাশিমপুর কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েই বিকাশ যশোরের বেনাপোল বন্দর দিয়ে কলকাতায় ঢোকেন, এরপর কলকাতা ছেড়ে তিনি এখন ফ্রান্সে। ঠাণ্ডা মাথার খুনি হিসেবে পরিচিত এই বিকাশের বাবার নাম বিমলকুমার বিশ্বাস। বাড়ি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার শিবনগরে।
ঢাকার মিরপুর পাইকপাড়ায় তাদের বাসা। ১৯৯৮ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার যে শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকা করেছিল, তাতে বিকাশ-প্রকাশের নাম ছিল। ওই তালিকার পরই প্রকাশ ভারতে পালিয়ে যান। সেখানে তিনি আইন বিষয় নিয়ে লেখাপড়া করেন। পরে তিনি চলে যান ফ্রান্সে। প্রায়ই তাকে সেখানকার বাঙালিদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা যায়। সেখানে বেড়াতে যাওয়া পূর্বপরিচিত অনেক বাংলাদেশির আতিথেয়তা মেলে প্রকাশের বাসায়। তবে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ হলেও প্রকাশের ব্যাপারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দাদের কাছে এ ব্যাপারে কোনো তথ্য নেই।
সূত্র জানায়, বিদেশে থেকেই শীর্ষসন্ত্রাসী ওমর ফারুক কচি এলাকার চাঁদাবাজির নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণ করছেন বাহিনীর মাধ্যমে। কচি বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে যারা এলাকায় সক্রিয় তারা হচ্ছেন ইরফান, রকিব, লম্বা সেলিম, বস্তি শহীদ, বিল্লাল, হিমেল ও হাসান গাজি। এরা শ্যামপুর, জুরাইন, পোস্তগোলা বাহাদুরপুর লেন, ফরিদাবাদ গেণ্ডারিয়া ও মিলব্যারাক ও বাংলাবাজার ঋষিকেশ দাস লেন, লালকুঠি, শ্যামবাজার, দয়াগঞ্জ, মীর হাজিরবাগ ও এর আশপাশের এলাকার ব্যবসায়ীর কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করে হুন্ডির মাধ্যমে কচির কাছে পাঠান। লম্বা সেলিম ও হাসানগাজি ক্যাশিয়ার হিসেবে এই টাকা জমা করেন। পরে কচির নির্দেশনা অনুযায়ী একটা অংশ কচির কাছে পাঠানো হয় বাকি অংশ সহযোগীদের মধ্যে বণ্টন করা হয়।
এদের মধ্যে ইতিমধ্যে অনেকে ক্রস ফায়ার সহ বিভিন্ন ভাবে মারা গেছে। যারা বেঁচে আছে তারা নতুন ভাবে কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করে রাজনৈতিক ছত্রছায়া নিয়ে চালাচ্ছে অপরাধের সম্রাজ্য। সূত্র জানায়, যাত্রাবাড়ী থেকে শুরু করে ফরিদাবাদ এলাকা পর্যন্ত প্রায় দুই শতাধিক শিল্প-কারখানা রয়েছে। এসব শিল্প-কারখানার অধিকাংশই কচির নিয়ন্ত্রণে। সন্ত্রাসীরা নিয়মিত চাঁদা প্রদানকারী ব্যক্তিকে ‘কাস্টমার’ বলেন। এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও শিল্প-কারখানা থেকে নিয়মিত টাকা আহরণের পর একটি মোটা অঙ্ক কচির কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বাকি টাকা কচির নির্দেশনা অনুসারে নিজেরা ভাগ করে নেন।
কচি বর্তমানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে অবস্থান করলেও মাঝে-মধ্যে নেপালেও যাতায়াত করেন বলে খবর রয়েছে। জানা গেছে, ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর মধ্যে বর্তমানে ভারতে আছে সুব্রত বাইন, মোল্লা মাসুদ, তানভীরুল ইসলাম জয়, হারিছ আহমেদ ও ইমাম হোসেন। জিসান ও আবদুল জাব্বার মুন্না দুবাইয়ে আত্মগোপনে থেকে ঢাকায় খুন-খারাবি ও সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি করছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো কোনো কর্মকর্তার সঙ্গে তার যোগাযোগ থাকারও অভিযোগ শোনা যায়। দেশের চাঁদার টাকায় দুবাইয়ে শীর্ষসন্ত্রাসী জিসান হোটেল ব্যবসা খুলেছেন। অভিযোগ আছে, জিসান বিদেশ থেকে ফোন করে কয়েকজনকে ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতা বানিয়েছেন। সূত্র জানায়, পুরস্কার ঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মধ্যে পিচ্চি হান্নান ক্রসফায়ারে মারা যান আর আলাউদ্দিন নিহত হন গণপিটুনিতে।
২০০৭ সালে ওয়ান-ইলেভেনের পর রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন যুবলীগ নেতা লিয়াকত হোসেন। সাদা পোশাকধারী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় বলে তার পরিবারের অভিযোগ। পুরস্কার ঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মধ্যে সবচেয়ে দুর্র্ধষ কালা জাহাঙ্গীরের কোনো খোঁজ নেই। তিনি মারা গেছেন বলেই আন্ডারওয়ার্ল্ড সূত্রগুলো দাবি করেছে। গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে কারাগারে আটক আছেন পিচ্চি হেলাল, টিটন, ফ্রিডম সোহেল, খোরশেদ আলম ওরফে রাশু ও আব্বাস ওরফে কিলার আব্বাস। কামাল পাশা ওরফে পাশা ইতিমধ্যে মারা গেছেন। পুরস্কার ঘোষিত আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী আমিন রসুল সাগর যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে সব ধরনের চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। ঢাকার আশকোনায় তার রয়েছে পাঁচতলা বাড়ি। আগা শামীম আহমেদ কানাডায় আছেন কয়েক বছর ধরে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উন্নয়নের সোপানে কোন সন্ত্রাস চাঁদাবাজির স্থান হবেনা। সবাই আসবে আইনের আওতায়। এমনটাই দাবী সবার। আগে সোনার বাংলা পরে অন্যসব। সাধু সাবধান।
এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়
Leave a Reply