মোঃ আবদুল আউয়াল সরকার, কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধি :
বাঙ্গি বা কাকড় এক রকমের শশা জাতীয় ফল। ইংরেজীতে একে বলা হয় mask melon। এর বৈজ্ঞানিক নাম cucumis melo। আমরা অনেকেই এই ফলটিকে পছন্দ করিনা বা অন্যান্য বিদেশী ফলকে এর থেকে বেশী গুরুত্বপূর্ণ ভাবা হয়। কিন্তু এর রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। রমজানে সতেজতা আনতে এ ফলের জুড়ি নেই।
ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের কোল ঘেঁষা কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার ইলিয়টগঞ্জ ইউনিয়নের গ্রামের কম-বেশি সবাই বাঙ্গি চাষের সঙ্গে জড়িত। এখানে দিন দিন বাঙ্গি বা ফুটি চাষ এতটা জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে যে, এখন এ গাঁয়ে আর একটিও পরিবার খুঁজে পাওয়া যাবে না যারা অন্তত বাঙ্গি চাষ করে না।
বাণিজ্যিকভাবে বাঙ্গি চাষে লাভবান দাউদকান্দির কৃষকরা। এই উপজেলায় কম-বেশি সবাই বাঙ্গি চাষ করে থাকেন। সহজ চাষ পদ্ধতি ও খরচ কম পাশাপাশি বিক্রি করে লাভবান হওয়ায় যায় বলে দিন দিন এর চাষ বাড়ছে।
জানা যায়, কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার ইলিয়টগঞ্জ ইউনিয়নের টামটা গ্রামের প্রায় সবাই বাঙ্গি চাষের সাথে জড়িত। প্রায় অনেক বছর আগে সুদূর চীন থেকে এর বীজ নিয়ে আসা হয়েছিল। খেতে সুস্বাদু হওয়ায় সারাদেশে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। মার্চ-মে বেলে-দোঁআশ মাটিতে বাঙ্গি বেশ ভালো ফলে। খুব অল্প সময়ের মৌসুমী ফল এটি। ডিসেম্বরের শুরুতেই এ চারা রোপণ শুরু হয়। চলে ডিসেম্বরের শেষ পর্যন্ত। টানা তিন মাস ধরে কৃষকরা এর পরিচর্যার মাধ্যমে চাষ করে থাকেন। উৎপাদিত ফসল ভালো দামে বিক্রি করে কৃষকরা লাভবান হতে পারেন। তাই দিন দিন এর চাষ বেশি জনপ্রিয় হচ্ছে।
চাষি মোঃ মনির মিয়া বলেন, আমি এবছর ৫ বিঘা জমিতে বাঙ্গির চাষ করেছি। চাষে সব মিলে ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ইতোমধ্যে জমি থেকে তুলে ৯০ হাজার টাকার বাঙ্গি বিক্রি করেছি। জমিতে আরো যা আছে ২০ হাজার টাকার বিক্রি করতে পারবো।
তিনি আরো বলেন, ফজরের নামাজ পড়ে বেরিয়ে পড়ি। জমি থেকে বাঙ্গি তুলে সকাল ৮-৯ টার মধ্যে বাজারে নিয়ে বিক্রি করি। সেখানে পাইকার ও খুচরা দুইভাবেই বিক্রি করি। আমরা এর চাষ করে লাভ করতে পারছি।
ব্যস্ততা কেবল মনির মিয়ারই নয়। এ গাঁয়ের অশীতিপর রহিম, আলী আযম, আজগর মিয়া এরা সবাই সেই ভোরে বাঙ্গি ক্ষেতে ছোটে এসেছেন। ছেলে বুড়ো সবাই ব্যস্ত বাঙ্গি তোলা আর বিক্রি নিয়ে।
কৃষি সম্প্রারণ অধিদফতর কুমিল্লার উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, বাঙ্গি খুবই সুস্বাদু একটি ফল। এতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি, শর্করা ও সামান্য ক্যারোটিনসমৃদ্ধ। মানবদেহের বিভিন্ন রোগের প্রতিকার হিসেবেও এটি ভালো কাজ করে। দাউদকান্দি উপজেলায় প্রায় ৫০০ একর জমিতে বাঙ্গির চাষ হয়েছে। কৃষি বিভাগ কৃষকদের সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়ে আসছে।
এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়
Leave a Reply