পাবলিক পরীক্ষা, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা, বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষা থেকে শুরু করে প্রাথমিক স্তরের বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্রও ফাঁস হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবিধ উদ্যোগের পরেও কোনো ভাবেই যেন ঠেকানো যাচ্ছে না এই প্রশ্নফাঁস। অতীতে বিভিন্ন সময়ে একটি-দুটি বিষয়ের প্রশ্নপত্র ফাঁস হলেও ২০১২ সালের পর থেকে পরীক্ষা হলেই কোন না কোনো প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে বা প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ উঠছে। চলতি বছরের ১৮ ডিসেম্বর বহুল প্রচারিত দৈনিক প্রথম আলোর এক প্রতিবেদকের মতে, ‘‘২০১২ সালের পর থেকে বিগত সাড়ে পাঁচ বছরেই প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী, জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট, এসএসসি ও এইচ এস সি পরীক্ষায় অন্তত ৮০টি বিষয়ের(পত্রের) প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠে’’।
অতীতে অধিকাংশ সময়ে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠলেও গুজব বলে উড়িয়ে দেয়া হতো। কিন্ত বিষয়টা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, তথ্য প্রযুক্তির উৎকর্ষতার এই যুগে উড়িয়ে দিয়েও তা চেপে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। সম্প্রতি বরগুনা সদর ও বেতাগী উপজেলায় প্রথম, দ্বিতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ায় ৩৯৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। এভাবে বারবার বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস আমাদের জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থায় অশনি সংকেত।
এতোদিন পাবলিক পরীক্ষাসহ নানা পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ব্যাপারটা পুরনো হলেও এবার চট্টগ্রাম মহানগরীর তিনটি সরকারী বিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল সরকারিভাবে প্রকাশের পূর্বেই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে ফলাফল ফাঁস হয়ে যায়।
ইতোপূর্বে প্রশ্নপত্র ফাঁসের জন্য দেশের কোচিং সেন্টারগুলোকে অনেকাংশে দায়ী করা হতো। যার প্রেক্ষিতে পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে কোচিং সেন্টারগুলো বন্ধ রাখা হতো। তা সত্ত্বেও তো প্রশ্নপত্র ফাঁস কোনো ক্রমেই বন্ধ হয়নি। উপরন্তু বৃদ্ধিই হয়েছে। সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর অনুসন্ধানে প্রশ্ন ফাঁসে খোদ সরকারি কতিপয় অসৎ কর্মকর্তা জড়িত এবং শিক্ষাবোর্ড, বিজি প্রেস, ট্রেজারি ও পরীক্ষাকেন্দ্র হলো প্রশ্নপত্র ফাঁসের সবচেয়ে বড় উৎস মন্তব্য করেছে।
শিক্ষাই যখন জাতির মেরুদন্ড। এ মেরুদন্ড যাতে ভেঙ্গে না পড়ে। দেশের শিক্ষার্থী আর অভিভাবকের মনে যাতে চরম হতাশার প্রতিধ্বনি বেজে না ওঠে সেই লক্ষ্যে প্রশ্নফাঁসের মতো স্পর্শকাতর ঘটনার যাতে পূনরাবৃত্তি না হয় সেজন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। এছাড়া প্রশ্নফাঁসের সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ হয়। অন্যথা-বারবার প্রশ্ন ফাঁস, শিক্ষা ব্যবস্থার সর্বনাশ ডেকে আনবে।
লেখক: কবি ও সাহিত্যিক
এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়
Leave a Reply