শুক্রবার, ০২ জুন ২০২৩, ০৬:৫২ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
নীলফামারীতে ট্রেন আটকিয়ে মানববন্ধন ঢাকাসহ তাপপ্রবাহ বইছে ৬০ জেলায় সোনারগাঁয়ে ৭টি রেষ্টুরেন্টসহ দুই হাজার অবৈধ গ্যাস বিচ্ছিন্ন ১ জনকে আটক স্বাস্থ্যে বরাদ্দ বাড়ছে ১১৮৯ কোটি টাকা দাম কমবে ইন্টারনেটের ১৬১ টাকা কমলো ১২ কেজি এলপিজির দাম মেলান্দহের আদ্রা ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে কুচক্রিমহলের ষড়যন্ত্র! উত্তরা আব্দুল্লাহপুর বেড়িবাঁধ রেললাইন বস্তি অপরাধ মাদকের অভয়ারণ্য গুলশান-বনানীর বিস্তৃত এলাকার একচ্ছত্র মাদক সম্রাট হুমায়ুন কবির গাজী ক্ষমতার জোরে অন্যের জমি দখলের চেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত মেজর মোস্তফা কামালের বিরুদ্ধে; থানায় অভিযোগ

বিবেকানন্দের কারুশিল্প সামগ্রীর কদর এখন বিদেশের বাজারেও

Reporter Name
  • Update Time : রবিবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৯
  • ৫২ Time View

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি :

 

গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলাধীন উজানী ইউনিয়নে অজপাড়াগাঁয় মহাটালি নামে একটি গ্রামে কারুশিল্পী বিবেকানন্দ মন্ডল বাস করেন। তিনি কাঠ খোদাই করে তার নিপুন হাতে তৈরি করে যাচ্ছেন বিভিন্ন দেব দেবী, মহাপুরুষ ও সাধু ব্যাক্তিদের সুন্দর সুন্দর মূর্তি। নিজ এলাকা সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে তার ব্যাপক পরিচিতি ও চাহিদা। সমাজে রয়েছে তার বিশাল কদরও বটে।

 

সরেজমিনে কারুশিল্পী বিবেকানন্দ মন্ডলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িটি যেন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, কবি-সাহিত্যিক, মনীষী ও হিন্দু স¤প্রদায়ের দেব-দেবীর মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। এখানে রয়েছে নানা বন্য জীবজন্তুর মূর্তি। এরা জীবিত না হলেও তাদের সবাইকে কাঠে খোদাই করে জীবন্ত করার আপ্রান চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি। তার চিত্রকর্মে প্রতিনিয়ত উঠে এসেছে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু, স্বামী বিবেকানন্দ, মাদার তেরেসা, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর,বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, গৌতম বুদ্ধ, রাম কৃষ্ণ পরমহংসদেব, লোকনাথ ব্র²চারী, সরস্বতী, মনসা দেবী, গণেশ পাগলসহ অসংখ্য দেবদেবী ও মনীষী। তার তৈরি ভাস্কর্য বিভিন্ন মন্দিরে পূজা অর্চনার জন্য স্থানও পেয়েছে।

 

বিবেকানন্দ মন্ডল বলেন, প্রায় ৩০ বছর যাবৎ এ কাজ করছি। আমার বাবা বুদ্ধিমন্ত মন্ডল পেশায় একজন সাধারন কৃষক ছিলেন। পরিবারের খরচ মেটানো বাবার পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠেনি। তাই সংসারের হাল ধরতে কাঠমিস্ত্রির যোগালি হিসেবে কাজ শুরু করি। ১৯৭৫ সালে চতুর্থ শ্রেণীতে পড়া অবস্থায় আমার বয়স ১০ বছর। কাজ শিখি নানা আসবাবপত্র তৈরির। চাহিদাও বেড়ে যায় আমার তৈরি করা হরেক রকম জিনিষ পত্রের।

 

ভাস্কর্য বিক্রি করে যে বাড়তি আয় হয় তা দিয়েই ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালাই। ইচ্ছা ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর একটি ভাস্কর্য তৈরি করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে দেব। তাই শত অভাবের মধ্যেও কাঠ কিনে বঙ্গবন্ধুর আর প্রধানমন্ত্রীর দুটি ভাস্কর্য তৈরি করেছিলাম। সেই দুটি ভাস্কর্য নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি গিয়েছিলাম। কিন্তু আমাকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। পরে শেখর সাহেবের কাছে তা দিয়ে আসি। আমার ইচ্ছা ছিল প্রধানমন্ত্রীকে আমার শিল্পকর্ম তৈরি ও সংসারের অভাব অনাটনের কিছু কথা শোনাব।
তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে আমার তৈরি করা কাঠের মূর্তি স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ জাদুঘর, গণভবনসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে।

 

এ ছাড়া দেশের গন্ডি পেরিয়ে ভারতের বিভিন্ন মন্দিরেও স্থান করে নিয়েছে কাঠে খোদাই বিভিন্ন দেব-দেবীর মূর্তি। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ফেলারাম পাগলের মন্দিরের জন্য দেড়শ মূর্তি তৈরি করেছি। বর্তমানে বাগেরহাটের জেলার চিতলমারী উপজেলার পিঁপড়ার ডাঙ্গা গ্রামে নিত্যানন্দ ধাম নামে একটি সেবা আশ্রমে ২০টি দেব বেদীর মূর্তি সংবলিত একটি রথ তৈরির কাজ করছেন।

 

শিক্ষক সরোজ মন্ডল জানান, মহাটালী এলাকায় তিনি একজন ভালো আসবাবপত্র তৈরির মিস্ত্রি হিসেবে পরিচিত পেয়েছেন। পাশাপাশি শিল্পকর্মের কাজও করেন তিনি। দীর্ঘ দিন ধরে অন্যের বাড়িতে শ্রম বিক্রির ফাঁকে এবং গভির রাত জেগে কাঠ খোদাই করে ভাস্কর্য তৈরি করে চলেছেন কারুশিল্পী বিবেকানন্দ মন্ডল। কাঠ খোদাই করে প্রতিনিয়ত তার নিপুন হাতে তৈরি করে যাচ্ছেন নিত্য নতুন স্বপ্ন। কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি ও অভাবের কারণে তিনি শিল্পকর্মে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারেননি। সরকারি বা বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে তিনি হয়ে উঠতে পারেন একজন খ্যাতিমান ভাস্কর্য শিল্পী।

 

বিবেকানন্দের স্ত্রী গীতা রানী মন্ডলের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, পাঁচ সদস্যের সংসার তাদের। কোনো কৃষি জমি নেই। কাঠাখানেক জমিতে কুড়েঘর বানিয়ে বসবাস করি আমরা । সংসারে দুই মেয়ে, এক ছেলে। বড় মেয়েকে লেখাপড়া শেখাতে পারেননি তাই অল্প বয়সে বিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছি। ছেলে বিভাষ মন্ডল ফরিদপুর পলিটেকনিক্যাল ডিপ্লোমা কোর্সে ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে এখন বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের জন্য ঢাকায় কোচিং করছে। ছোট মেয়ে গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ থেকে ইতিহাসে অনার্স পাস করার পর তাকেও বিয়ে দেওয়া হয়েছে।

 

উজানী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান দীনেশ চন্দ্র মন্ডল বলেন, আমরা সবাই তাকে কাঠমিস্ত্রি হিসেবে জানলেও তার আলাদা কিছু গুণ রয়েছে। সে ছোটবেলা থেকে কাঠের ভাস্কর্য তৈরি করে। তবে সে আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল। সরকার বা কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতা ও আর্থিক পেলে সে নিজেকে বড় শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারত। সমাজে বিত্তবান ব্যাক্তিরাও যদি তাকে

 

আর্থিকভাবে সহযোগিতার হাত বাড়ালে সে বর্তমান সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে শিল্প নৈপূন্যে চমৎকার অবদান রাখতে পারতো। এজন্য তিনি বিভিন্ন সরকারী, বেসরকারী, সামাজিক সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কাছে বিবেকান্দ মন্ডলের শিল্প নৈপূন্যতা বাচাঁতে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়