প্রাণের বাংলাদেশ ডেস্কঃ
গ্রাম থেকে ঢাকা এসেছে জাতীয় দৈনিক আমার প্রাণের বাংলাদেশ পত্রিকার প্রধান কার্যালয়ে জামালপুর প্রতিনিধি মোমিনুল ইসলাম । দুপুরের খাবার সেরে ক্ষাণিকটা বিশ্রাম নিয়ে বিকেলে প্রাণের বাংলাদেশ পত্রিকার ডেস্ক ইনচার্জ সোহরাব হোসেনকে নিয়ে বিকেলে ঘুরতে বের হলে তাদের অভিজ্ঞতা হয় ভিন্ন রকম। তাদের গন্তব্য ছিল উত্তরা-বিমানবন্দর-খিলক্ষেত। আব্দুল্লাহপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত তারা যায় বাস দিয়ে। বিমানবন্দরে নেমে ফুটপাত ধরে সদ্য তৈরি করা সারিবদ্ধ ঝোপঝাড় বনসারি গাছের পাশের ফুটপাত ধরে হাঁটতে থাকে খিলক্ষেতের উদ্দেশ্যে। সবকিছু দেখে পত্রিকা অফিসে এসে সাংবাদিক মোমিন আক্ষেপ করে বলেন, মনে করেছিলাম রাজধানীর এয়ারপোর্ট না জানি কত ভালো। কিন্তু এখানে যা চলছে তা দেখে আমি বিস্মিত হয়ে গেছি। এর চেয়ে আমার জামালপুর হাজরাবাড়ী অনেক ভালো। তাদের বর্ণনায় পত্রিকার সম্পাদকের লেখনীতে উঠে এসেছে বাস্তব চিত্র। ঘটনার বিবরণটি তাদের মুখে যেভাবে শুনেছি। ফুটপাত ধরে সাংবাদিক মোমিনুল ইসলাম ও ডেস্ক ইনচার্জ সোহরাব হোসেন হাঁটছে এয়ারপোর্টের ফুটপাত ধরে খিলক্ষেতের উদ্দেশ্যে।
বিপত্তিটা ঘটলো ঠিক তখনই। এক যৌনকর্মীর অনভিপ্রেত প্রস্তাবনায় আমাদের সরব মুখগুলো নিমিষেই নিস্তবদ্ধতায় পর্যবসিত হলো। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে দেখলাম এমন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে আজকাল ফুটপাত ধরে হাঁটা পথচারীদের প্রায়শই পড়তে হয় বিপত্তির মধ্যে । এতো গুরুত্বপূর্ণ একটি এলাকা অথচ এখানেই কিনা যৌন কর্মীদের লেগে থাকে সরব ? নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতি থাকলেও তাদের ভূমিকা অল্পতেই বুঝতে পারলাম এখানে কর্তব্যরত বিভিন্ন প্রশাসনের কর্মকর্তা এসব ভাসমান হিজড়া ও পতিতাদের নিকট থেকে নিয়মিত মাসোয়ারা নেওয়ার কারণে কেউ এসব দৃশ্য দেখে দর্শকের মতো চেয়ে থাকলে খোদ প্রশাসনের কর্মকর্তারাই তাদেরকে তাড়িয়ে দেন এবং বলে এখানে থাইকেন না, আপনাদের মোবাইল টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নিতে পারে ।
অন্যদিকে এসব পতিতারা আমাদেরকে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি দিয়ে আকর্ষণ করার জন্য ইশারা দিয়ে ডাকতে থাকে। সবচেয়ে নিরাপত্তার স্থানটি যেখানে থাকা উচিৎ ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট সেখানে সামান্যতম নিরাপত্তাও নেই। এই রাস্তায় চলে দেশের রাষ্ট্রপতি থেকে বিভিন্ন দেশের ডিপ্লোমেটিক ব্যক্তিরা। যেকোন সময় ঘটতে পারে নাশকতামূলক ঘটনা।
বলা চলে প্রশাসনের নাকের ডগার ওপর দিয়েই চলছে ভাসমান পতিতাদের বিনা পুঁজিতে ব্যবসা। এয়ারপোর্ট পুলিশ বক্স থেকে শুরু করে খিলক্ষেত পুলিশ বক্স পর্যন্ত মাঝখানের এই জায়গাটি এখন অসভ্য উদ্যানে পরিণত হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কনস্টেবল আমাদেরকে জানান, শুধু এই ভাসমান পতিতাদের কাছ থেকে পুলিশ বক্স গুলো মাসে ৩-৪ লাখ টাকা আয় করেন। এখানে অন্যান্য প্রশাসনের লোক এবং কিছু নামধারী হলুদ সাংবাদিকরাও বখরা বসায় বলে জানা যায়।
বিশেষ নিরাপত্তার মাধ্যমে একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা। এখানে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ সিসি ক্যামেরা। বিমানবন্দরের পশ্চিমপাশে জঙ্গল পরিষ্কার করে নতুন টার্মিনালের কাজ শুরু করলে এসব পতিতারা পূর্বপাশের সৌন্দর্য মন্ডিত পাতা বাহার গাছ ও ঝোপঝাড় বিভিন্ন লাইট পোস্টের আড়ালে এখন যৌনকর্ম চালাচ্ছে পথচারীদের সাথে।
সন্ধ্যা নামলেই আশপাশের ফুটপাতে বোরকা-নেকাব পরিহিত এক বিশেষ বেশভুষার নারী দেখা যায়। যাদের দেখলেই চেনা যায়, কারণ এরা স্বাভাবিকতার ঊর্ধ্বে, এমন অঙ্গভঙ্গি করে আড়াল আধারে দাঁড়িয়ে থাকে, এরাই মূলত উল্লিখিত পতিতা। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে এদের দেখা মেলে এখানে। রাতে অবৈধ কাজেরই দৌরাত্ম্য বেশি। সন্ধ্যার পর থেকেই চলে এ দলের প্রস্তুতি। সংখ্যায় কম হলেও অন্ধকার বাড়ার সাথে সাথে এদের তৎপরতা বাড়ে। এ দলে রয়েছে পতিতা, ছিনতাইকারী ও মাদককারবারীরা। সম্পূর্ণ এলাকাটি সন্ধ্যা হওয়ার সাথে সাথে অবাধে চলে মাদক সেবন। রাস্তায় গাঁজার উৎকট গন্ধে পথচারীদের শ্বাসরুদ্ধ হওয়ার অবস্থা হয়ে যায়।
স্থান ও সময় ভেদে এদের রূপ পরিবর্তন হয়। বদলে যায় অপরাধের ধরন ও কৌশল। রাজধানীতে কয়েক ধরনের পতিতা রয়েছে। এদের মধ্যে জায়গা ও স্থান ভেদে রয়েছে পরিবর্তন। ছিনতাইকারীদের হিসাবও অনেকটা একই রকম।
সমাজে অবস্থানগত দিক থেকে রাজধানীতে দুই ধরনের পতিতা রয়েছে। একদল অবস্থান নেয় বিভিন্ন বাসা-বাড়ি বা আবাসিক হোটেলে। আরেক দল ভ্রাম্যমাণ।
যারা ভ্রাম্যমাণ তাদের মধ্যে আছে আবার তিনটি গ্রুপ। একটি গ্রুপ শুধুমাত্র পতিতাবৃত্তির ওপর নির্ভরশীল। সমাজের ভেতরে এদের তেমন আনাগোনা নেই। এরা থাকে রাস্তার পাশে বা কোনো নিন্মমানের জায়গায়। সাধারণত বড় বড় শহরের বিভিন্ন রাস্তা, অলিগলি, নানা ধরনের উদ্যান, লেকের ধার, নানা ধরনের জঙ্গলাকীর্ণ জায়গায় দাঁড়িয়ে খদ্দের সংগ্রহ করে এরা। যৌনকর্মীদের মধ্যে এ শ্রেণি সবচেয়ে নিম্নমানের।
ভ্রাম্যমাণ পতিতাদের সাথে সবসময় থাকে এক প্রকারের বিছানার চাদর, যা সে দ্রুত বিছিয়ে তার শিকার মক্কেলকে নিয়ে ঘটাতে পারে ক্রিড়াকর্ম। খদ্দের সংগ্রহ করার পর একটু অন্ধকারে গিয়ে অনেকটা জনসম্মুখেই বা অন্যান্য খদ্দেরদের সামনেই তারা খদ্দেরের মনোরঞ্জন করে। এদের অনেকেরই আগমন বিভিন্ন পতিতালয় থেকে। সরকার যখন পতিতাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করেই বিভিন্ন পতিতালয় ভেঙে দেয়ায় ভাসমান হয়ে এরা বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে। কেউ কেউ আবার আসে শহরের বিভিন্ন বস্তি থেকে। বস্তির মেয়েরা-যাদের চেহারা বা শরীর স্বাস্থ্য পুরোপুরি বা অনেকটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছে অন্য কোনো কাজ করতে সক্ষম নয় তারা এসে ভিড় জমায় শহরের বিভিন্ন জনাকীর্ণ জায়গায়। এসব স্থান থেকে এইডস থেকে শুরু করে ছড়াতে পারে সিফিলিশ, গনোরিয়া সহ বিভিন্ন যৌন রোগ।
এসব বিষয় নিয়ে সংশ্লিষ্ট পুলিশ বক্স ও থানায় যোগাযোগ করলে তারা একেঅপরকে দোষ দিয়ে নিজেদেরকে আড়াল করার চেষ্টা করে জানায়, এই এলাকা আমাদের দায়িত্বে নাই।
এ ধরনের পতিতাদের বেশি আনাগোনা লক্ষ্য করা যায় বিমানবন্দর এলাকায়। সন্ধ্যা নামার পরই সব গোছগাছ করে রাখে এখানকার পতিতারা। খদ্দেরের মনোরঞ্জনের অস্থায়ী এক ধরনের ঘরও করে এখানকার পতিতারা। এ রঙ্গকুঞ্জ এক ফালি কাপড় বা পলিথিন দিয়ে সাজানো হয়। কেউ কেউ আবার গায়ের ওড়না দিয়েই বেড়া বানিয়ে লোকচক্ষু থেকে নিজের আদিম পেশাটি আড়ালের চেষ্টা করে। চলবে…
এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়
Leave a Reply