বুধবার, ২২ মার্চ ২০২৩, ০২:১৫ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
টঙ্গীতে জমি আত্মসাৎ এর জন্য নিজের মাথায় আঘাত করে মিথ্যা মামলা সাজালেন ছোট ভাইসহ তিনজনের বিরুদ্ধে বাঞ্ছারামপুরকে ভূমিহীন ও গৃহহীন মুক্ত ঘোষনা করার লক্ষে ইউএনও এর প্রেস ব্রিফিং মিরপুরে ছিনতাইকারী চক্রের ৫ সদস্য গ্রেফতার : দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার চালের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করলে ব্যবস্থা: খাদ্যমন্ত্রী চেম্বার আদালতেও রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে রিট খারিজ ইলিয়াস-বাবুলের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদনের নতুন দিন ধার্য টাঙ্গাইল-৩ আসন আওয়ামীলীগের গৃহবিবাদের সুযোগ নিতে চায় বিএনপি হজ পালনে থাকছে না বয়সসীমা, শর্ত তুলে নিলো সৌদি আরব কুষ্টিয়ায় পরিবারের সবাইকে রুমে আটকে দুর্ধর্ষ ডাকাতি, ১৫ লাখ টাকার মালামাল লুট কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোন কর্তৃক শরণখোলায় বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান

ভয়াবহ ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে বাংলাদেশ হতে পারে আট মাত্রার ভূমিকম্প

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩
  • ৪২ Time View

 

(আট মাত্রার ভূমিকম্পে ঢাকাসহ সারাদেশে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা বা বিপদের মাত্রা অনেক বেশি বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাংলাদেশে যেভাবে অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণ করা হয়েছে, তাতে এখানে ভূমিকম্প হলে ভয়াবহ এক পরিস্থিতি তৈরি হবে।)

 

শের ই গুল :

 

বিগত অনেক বছর ধরে সারাদেশে মাঝে মধ্যেই ছোট ও মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প হলেও এতে তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। কিন্তু বড় মাত্রার ভূমিকম্প হলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে বলে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা। ভূতত্ত্ব বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের সিলেট থেকে চট্টগ্রাম অঞ্চলে কয়েকটি প্লেট থাকার কারণে এসব এলাকা ভূমিকম্পের বড় ঝুঁকিতে রয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলছেন, উত্তরে তিব্বত সাব-প্লেট, ইন্ডিয়ান প্লেট এবং দক্ষিণে বার্মা সাব-প্লেটের সংযোগস্থলে বাংলাদেশের অবস্থান। ফলে সিলেট-সুনামগঞ্জ হয়ে, কিশোরগঞ্জ চট্টগ্রাম হয়ে একেবারে দক্ষিণ সুমাত্রা পর্যন্ত চলে গেছে। সাত দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পের আঘাতে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে তুরস্ক ও সিরিয়া। এমন সময় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশও। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দুই যুগ ধরে এ নিয়ে গবেষণা করেছে। সেখানে দেখা গেছে, ইন্ডিয়া প্লেট ও বার্মা প্লেটের সংযোগস্থলে দীর্ঘসময় ধরে কোন ভূমিকম্পের শক্তি বের হয়নি। ফলে সেখানে ৪০০ থেকে হাজার বছর ধরে শক্তি জমা হয়ে রয়েছে।

ইন্ডিয়া প্লেট পূর্ব দিকে বার্মা প্লেটের নীচে তলিয়ে যাচ্ছে আর বার্মা প্লেট পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। ফলে সেখানে যে পরিমাণ শক্তি জমা হচ্ছে, তাতে আট মাত্রার অধিক ভূমিকম্প হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, বাংলাদেশে যেভাবে অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণ করা হয়েছে, তাতে এখানে ভূমিকম্প হলে ভয়াবহ এক পরিস্থিতি তৈরি হবে। অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেছেন, যে কোনো সময় বড় ধরনের ভূমিকম্প হতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছেন। সাধারণত এ ধরনের ক্ষেত্রে সাত বা আট মাত্রার ভূমিকম্প হয়ে থাকে। কিন্তু কবে বা কখন সেটা হবে, তা এখনো বিজ্ঞানীদের এখনো ধারণা নেই।’ সুনামগঞ্জ, জাফলং অংশে ডাউকি ফল্টের পূর্বপ্রান্তেও ভূমিকম্পের ঝুঁকি রয়েছে বলে বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন।

এসব ফল্টে ভূমিকম্প হলে ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা বা বিপদের মাত্রা অনেক বেশি বলে তিনি আশঙ্কা করছেন। বাংলাদেশে সর্বশেষ ১৮২২ এবং ১৯১৮ সালে মধুপুর ফল্টে বড় ভূমিকম্প হয়েছিল। ১৮৮৫ সালে ঢাকার কাছে মানিকগঞ্জে ৭ দশমিক ৫ মাত্রার একটি ভূমিকম্পের ইতিহাস রয়েছে। কোনো স্থানের ভূকম্পনের জন্য ফল্ট লাইন এবং টেকনিক স্ট্রেস ফিল্ড গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। সাধারণত, বড় ধরনের ভূকম্পন হয়ে থাকে প্লেট বাউন্ডারির মধ্যে। যদিও বাংলাদেশ প্লেট বাউন্ডারির মধ্যে নয়, তথাপি ভূপ্রাকৃতিক অবস্থান ও বিন্যাসের স্বকীয়তা বাংলাদেশকে ভূমিকম্প মণ্ডলের আশপাশেই ফেলেছে। বাংলাদেশকে ভূকম্পনের তিনটি জোনে ভাগ করা হয়েছে।

সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ জোন হিসেবে উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কিছু কিছু স্থান যেমন: সিলেট, রাঙামাটি, বান্দরবান, কক্সবাজার উল্লেখযোগ্য। ঢাকা ও চট্টগ্রাম মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ এবং পশ্চিম ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল সর্বাপেক্ষা কম ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত। ১৯৭৬ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত যতবার পাঁচ বা তার বেশি মাত্রায় ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে, তার প্রায় সব কটির উৎপত্তিস্থল সিলেট, মৌলভীবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবান ও কক্সবাজার এলাকায়। এসব অঞ্চলে ভবিষ্যতে আরও বেশি মাত্রার ভূকম্পনের পূর্বাভাস উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আসাম-বাংলা অঞ্চলে ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়েছিল ১৮৯৭ সালের ১২ জুন। ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসাম, মেঘালয়ের সীমান্তসংলগ্ন সিলেট, ময়মনসিংহ অঞ্চলকে উচ্চ মাত্রার ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে বলে চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে সিলেট, ময়মনসিংহ এবং রংপুর,ঢাকা, কুমিল্লা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের কিছু অংশ। এর মধ্যে সিলেট বিভাগের চারটি জেলায় বড় মাত্রার ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। একইভাবে ময়মনসিংহ বিভাগের পাঁচটি জেলাও ভূমিকম্পের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

ঢাকা বিভাগের মধ্যে টাঙ্গাইল, গাজীপুর, নরসিংদী জেলার অংশ বিশেষ, পুরো কিশোরগঞ্জ জেলা এবং কুমিল্লা বিভাগের মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা উচ্চ মাত্রার ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে। এ ছাড়া ভূমিকম্পের উচ্চ ঝুঁকিতে আছে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি জেলার উত্তরাংশ। মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে ঢাকা, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, কুমিল্লা, চাঁদপুর, ফেনী, নোয়াখালী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁ, রাজশাহী, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের অংশ বিশেষ, চট্টগ্রাম,বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলা। ভূমিকম্পের কম ঝুঁকিতে রয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের পুরো খুলনা ও বরিশাল বিভাগ।

ভূমিকম্পের সময় আপনার করণীয়ঃ ভূকম্পন অনুভূত হলে আতঙ্কিত হবেন না। ভূকম্পনের সময় বিছানায় থাকলে বালিশ দিয়ে মাথা ঢেকে টেবিল, ডেস্ক বা শক্ত কোন আসবাবপত্রের নিচে আশ্রয় নিন। রান্না ঘরে থাকলে গ্যাসের চুলা বন্ধ করে দ্রুত বেরিয়ে আসুন। বীম, কলাম ও পিলার ঘেষে আশ্রয় নিন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবস্থানকালে স্কুল ব্যাগ মাথায় দিয়ে শক্ত বেঞ্চ অথবা শক্ত টেবিলের নিচে আশ্রয় নিন। ঘরের বাইরে থাকলে গাছ, উঁচু বাড়ি, বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে দুরে খোলাস্থানে আশ্রয় নিন।

গার্মেন্টস ফ্যাক্টরী, হাসপাতাল, মার্কেট ও সিনেমা হলে থাকলে বের হওয়ার জন্য দরজার সামনে ভিড় কিংবা ধাক্কাধাক্কি না করে দুহাতে মাথা ঢেকে বসে পড়ুন। ভাংগা দেয়ালের নিচে চাপা পড়লে বেশি নড়া চড়ার চেষ্টা করবেন না। কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে রাখুন, যাতে ধুলা বালি শ্বাস নালিতে না ঢোকে। একবার কম্পন হওয়ার পর আবারও কম্পন হতে পারে। তাই সুযোগ বুঝে বের হয়ে খালি জায়গায় আশ্রয় নিন। উপর তলায় থাকলে কম্পন বা ঝাঁকুনি না থামা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে; তাড়াহুড়ো করে লাফ দিয়ে বা লিফট ব্যবহার করে নামা থেকে বিরত থাকুন। কম্পন বা ঝাঁকুনি থামলে সিঁড়ি দিয়ে দ্রুত বেরিয়ে পড়ুন এবং খোলা আকাশের নিচে অবস্থান নিন। গাড়ীতে থাকলে ওভার ব্রীজ, ফ্লাই ওভার, গাছ ও বৈদ্যুতিক খুটি থেকে দূরে গাড়ী থামান। ভূকম্পন না থামা পর্যন্ত গাড়ীর ভিতের থাকুন। ব্যাটারীচালিত রেডিও, টর্চলাইট, পানি এবং প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম বাড়িতে রাখুন। বিল্ডিং কোড মেনে ভবন নির্মাণ করুন।

 

 

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়