স্টাফ রিপোর্টার :
ভারতের সীমানা ছাড়িয়ে দর্শনা ও দামুড়হুদা সীমান্তের অবৈধপথ দিয়ে দেশে ঢুকছে মাদক। সেগুলো আবার বিভিন্ন সিন্ডিকেটের হাত ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যায়। আর এই কাজে এখন প্রাইভেট কার ও মাইক্রোবাসের ব্যবহার বেড়েছে। যেন চক চকে গাড়িতে মাদকের চালান! এই মাদকের চালান ঘিরে লুকিয়ে আছে বহু রহস্য।খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চুয়াডাঙ্গা জেলার সকল থানা এলাকার বিভিন্ন স্থানে মাদকের ছড়াছড়ি।
গত ১৫ মাসে দর্শনা থানা সহঅন্যান্য থানা মিলে মামলার সংখ্যা প্রায় হাজার খানেক । এর মধ্যে শুধু মাদকের মামলাই অর্ধেকের বেশি। মাদকের মামলায় গ্রেফতার হয়েছে সবচেয়ে বেশি। দর্শনা পৌর এলাকাসহ দর্শনা থানা এলাকায় ব্যাপকহারে মাদক সেবন ও মাদক ব্যবসা চলছে। প্রায় সময়ই মাদকব্যবসায়ী ও সেবনকারী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরা পড়লেও অনেকেই বেশ দাপটের সাথে চালিয়ে যাচ্ছে মাদক ব্যবসা।চুয়াডাঙ্গা সদর-উনিয়নের নাম- আলুকদিয়া, মোমিনপুর, কুতুবপুর, শংকরচন্দ্র, বেগমপুর, তিতুদহ, পদ্মবিলা, (আলমডাঙ্গা) ইউনিয়নের নাম- ভাংবাড়ীয়া, হারদী, কুমারী, বাড়াদী, গাংনী, খাদিমপুর, জেহালা, বেলগাছি, ডাউকী, জামজামী, নাগদাহ, খাসকররা, কালিদাসপুর, চিৎলা, আইলহাঁস, (দামুড়হুদা) ইউনিয়নের নাম- জুড়ানপুর, নতিপোতা, কার্পাসডাঙ্গা, কুড়ুলগাছি, পারকৃষ্ণপুর মদনা, হাউলী, দামুড়হুদা, নাটুদহ, (জীবননগর) ইউনিয়নেরনাম- উথলী, আন্দুলবাড়ীয়া, বাঁকা, সীমান্ত, হাসাদাহ, রায়পুর, মনোহর, কেডিকে।
প্রতিটি জেলা, থানা ও ইউনিয়ন এবং গ্রাম পর্যায়ে প্রবেশ করেছে মাদক সহ অন্যান্য চোরাকারবারী পণ্য। একেবারে সীমান্ত ঘেঁষা এলাকা চুয়াডাঙ্গার দর্শনা। এই অঞ্চল বরাবরই মাদকে সয়লাব মাদকবিরোধী অভিযানে ব্যবসায়ী গ্রেফতারের পাশাপাশি প্রতিনিয়ত উদ্ধার করা হচ্ছে ভারতীয় ফেনসিডিল ইয়াবা, বিদেশী মদ, কেরুর মদ, ট্যাপেন্ডাল ট্যাবলেট, গাঁজা ও গাজার গাছ, বিদেশী সিগারেট।
এ সকল মাদকের চিত্র বুঝিয়ে দেয় চুয়াডাঙ্গা জেলার মাদক পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ।অনুসন্ধানে মিলেছে, দর্শনা থানা এলাকার বিভিন্ন স্থানে প্রতিনিয়ত বসছে মাদকের আড্ডা। সেখানে বিকিকিনি হচ্ছে মাদক। এরমধ্যে মদনা গ্রামের টাওয়ার পাশে দোকানের পিছনে প্রতিনিয়ত চলছে মাদকের আড্ডা, পরানপুর স্কুল মাঠে সন্ধায় চলছে গাঁজা সেবন, দর্শনা রেলগেট সংলগ্ন এলাকায় প্রতিদিন বিকেলে চলে ইয়াবা ও ফেনসিডিল বিক্রি, দর্শনা রেল বাজারের মাছ পট্টিতে চলে গাঁজা ও জুয়ার আসর, দর্শনা হল্ট ষ্টেশনের দু’পাশে মাদক ব্যবসা চলছে রমরমা। এছাড়া দর্শনা রামনগর, জয়নগর, ঈশ্বরচন্দ্রপুর, শ্যামপুর, আজমপুরসহ বিভিন্ন স্থানে মাদকের হাট বসছে। সন্ধ্যা এসব স্থানে শুরু হয় মাদকের খেলা। হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে মরন নেশা ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজাসহ বিভিন্ন ধরনের নেশাজাত দ্রব্য।
এসব সেবন করছে উঠতি বয়েসের যুবক ও স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছেলেসহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার নানান বয়সী মানুষ। মাঝে কয়েক মাস আনাগোনা কম থাকলেও বর্তমানে প্রতিদিন দেখা যাচ্ছে, চুয়াডাঙ্গা জেলাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রাইভেটকার ও মটরসাইকেলসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহনযোগে দর্শনা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় মানুষের আসা-যাওয়া করতে। ফলে দর্শনা এলাকার বিভিন্ন গ্রামে ছড়িয়ে পড়ছে মরন নেশা মাদক।পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নের আক্কেল আলী বলেন, ‘আমাদের এই সীমান্তবর্তী পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নের নাস্তিপুর, ঝাঁঝাঁডাঙ্গা, ছয়ঘরিয়া, বড় বলদিয়া, ছোট বলদিয়া, কামার পাড়া, বাড়াদী, সুলতানপুর এই গ্রামগুলো আবারও মাদক ব্যবসায়ীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। শুধু তাই নয়, দর্শনা থানা এলাকার মধ্যেও এখন এই গ্রামগুলো মাদক ও স্বর্ণ পাচারের নিরাপদ রুট হিসাবে পরিচিত। মাঝে মাঝে প্রশাসনের তৎপরতায় কয়েকটি চালান ধরা পড়লেও বেশিরভাগই প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। যা দেশের ও সমাজের জন্য ক্ষতি।
আমাদের এই রুট দিয়ে প্রচুর পরিমাণে ভারতীয় ফেনসিডিল ও গাঁজা আসে এবং স্বর্ণ পাচার হয়ে যায়। তবে মাঝেমধ্যে পুলিশ-বিজিবির হাতে কিছু পাচারকারী সদস্য (বহনকারী) ধরা পড়লেও রহস্যজনক ভাবে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় রাঘববোয়ালরা অর্থাৎ মূল মালিক। তবে কি তারা এভাবেই পার পেয়ে যাবে? এদিকে, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার দর্শনা থানাধীন বেগমপুর ইউনিয়নের আকন্দবাড়িয়ার এক জন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘আমাদের আকন্দবাড়িয়া, রাঙ্গিয়ারপোতা, শিংনগরসহ আশপাশ এলাকা একসময় ছিলো মাদকের স্বর্গরাজ্য। তবে মাঝে কিছুদিন প্রশাসনের তড়িৎ অভিযানে অনেকে গ্রেফতার হয় এবং এই জেলার বেশ কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ি গুলি খেয়ে মারা যাওয়ার পর বেশ অনেকটাই বন্ধ হয়ে গেছিলো এই মাদক ব্যবসা। কিন্তু ইদানিং আবারও যেন মাথা উঁচিয়ে বেড়েই চলেছে এই মাদকের ব্যবসা। তবে কেন জানিনা দর্শনা এখন থানা হওয়ার পরও থানার নিকটবর্তী এলাকায় এরকম মাদকের ভয়াল থাবা?তাদের মতে, এখনও যদি প্রশাসনের পক্ষ থেকে তড়িৎ কোন পদক্ষেপ না নেয়া হয় তাহলে নীরবে ধীরে ধীরে এই সমাজ এই জাতি এই দেশ একদিন হবে শেষ।
এ ব্যাপারে চুয়াডাঙ্গা পুলিশের জেলা পুলিশ সুপারের সাথে প্রাণের বাংলাদেশের কথা হলে তিনি জানান, মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিনিই আমরা কোন না কোন ভাবে মাদকদ্রব্য উদ্ধার করছি। চেষ্টা করছি দর্শনা থানা এলাকা সহ সম্পূর্ণ চুয়াডাঙ্গা মাদক নির্মুল করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। মাদক বিরোধী অভিযানের মধ্য দিয়ে গ্রেফতার ও মামলা চলমান আছে। বিশেষ করে মাদকের কোন স্পট বা আড্ডার সন্ধান পাওয়া মাত্রই আমরা সেখানে অভিযান পরিচালনা করি এবং সে আড্ডাখানা ভেঙে গুড়িয়ে দিচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নয়, মাদক নির্মুলে সবধরনের লোকজনের সহযোগীতা প্রয়োজন। একসাথে একযোগে মাদকের বিরুদ্ধে কাজ করলে এ অঞ্চল মাদকমুক্ত হবে। বর্তমান সময়ে স্থানীয় বিভিন্ন ছোট বড় জনপ্রতিনিধি এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য ও অন্যান্য প্রশাসনিক কর্মকর্তারা মাদকের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট থানার সাথে বিভিন্ন বৈঠক করে চুয়াডাঙ্গা থেকে মাদক নির্মূল করার লক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন।
এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়
Leave a Reply