বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ ২০২৩, ০৪:৪৪ পূর্বাহ্ন

মাদারীপুরে শালিস মীমাংশার নামে কিশোরীকে জুতাপেটা করলো কাউন্সিলর ও আওয়ামীলগীগ নেতা

Reporter Name
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৭
  • ৩৭ Time View

স্টাফ রিপোর্টার, মাদারীপুর:
মাদারীপুর শহরের মধ্য খাগদি এলাকায় শালিস মীমাংশার নামে এক কিশোরীকে আওয়ামীলীগ নেতা ও পৌর কাউন্সিলর জুতা পেটা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার বিকালে। বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গত ১৮ ডিসেম্বর সোমবার দুপুরে শহরের মধ্য খাগদি এলাকার এক কিশোরীকে ফুসলিয়ে নিয়ে যায় একই এলাকার কুদ্দুস শরীফের ছেলে হাসান শরীফ। এর পরে মেয়েটিকে তামান্না নামে এক মহিলার কাছে বিক্রি করে দেয় হাসান। বিষয়টি ওই কিশোরীর পরিবার জানতে পেরে মাদারীপুর সদর উপজেলার খাকছড়ার করম বাজার থেকে গতশুক্রবার উদ্ধার করে। পরে কিশোরীর পরিবার স্থানীয়দের জানালে মঙ্গলবার বিকালে বিষয়টি নিয়ে শালিস মীমাংসায় বসে। শালিসে উপস্থিত ছিলেন মাদারীপুর পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আইয়ুব খান, ৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মুজাম খান, সাবেক কাউন্সিলর সামসুল হক খান, স্থানীয় প্রভাবশালী সেলিম মীরা, খবির খান, আকলিমা বেগমসহ শতাধিক লোকজন। শালিসদার আইয়ুব খান, মুজাম খান, সামসুল হক খানের সিদ্ধান্তে ওই কিশোরীকে দোষি দাবী করে ১০টি জুতার বারি প্রদানের নির্দেশ দেয়। একই সাথে হাসান শরীফকে ১০হাজার টাকা জরিমানা এবং ১০টি জুতার বারি প্রদানের নির্দেশ দেয়। নিদের্শ পেয়ে শালিসে উপস্থিত আকলিমা বেগম নামে এক নারী কিশোরীকে জুতা পেটা করে। ঘটনার পর থেকে কিশোরীর পরিবার রয়েছে নিরাপত্তাহীনতায়। লোকলজ্জার ভয়ে বাড়ির বাইরে বের হতে পারছেনা।

লাঞ্ছিতা ওই কিশোরীর ভাই জসিম ফকির বলেন, আমার বোনকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে বিক্রি করে দেয় হাসান। এরপর আমরা বোনকে উদ্ধার করি। পরে স্থানীয় প্রভাবশালীরা বিষয়টি মিমাংশা করে দেয়ার নামে আমার বোনকে জুতাপেটা করেছে।

লাঞ্ছিতা ওই কিশোরী বলেন, আমরা কোন দেশে বাস করি। আমার অনেক বড় ক্ষতি করেছে ওরা। এর বিচার তো পাইনি উল্টো শালিসের নামে আমাকে জুতা পেটা করেছে। আমি এর বিচার চাই।

শালিসদার ও স্থানীয় আওয়ামীগ নেতা মুজাম খান বলেন, মেয়ে চরিত্র খারাপ। সালিসে দোষি প্রমান হওয়ায় আমার জুতা পেটা করেছি।

এব্যাপারে স্থানীয় কাউন্সিল আইয়ুব খানের সাথে যোগাযোগ করতে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিফ করেননি। তবে স্থানীয় শালিসদার আকলিমা বেগম বলেন, শালিসে সিদ্ধান্ত হয় জুতা পেটা করার। শালিসরা জুতা পেটার নির্দেশ দিলে আমি নির্দেশ পালন করেছি। আমি জোরে জোরে না পিটিয়ে আস্তে পিটিয়েছি। আমি কাউন্সিলর ও শালিসদারদের নির্দেশ পালন করেছি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্থানীয় ব্যক্তি বলেন, কাজটি ঠিক করেনি শালিসদাররা। ওই পরিবারটি গরীব বলে ওদের সাথে অবিচার করেছে।

মাদারীপুর জেলা আওয়ামীলীগের দপ্তর সম্পাদক গোলাম মাওলা আকন্দ বলেন, এধরনের ঘটনায় সালিসযোগ্য নয়। এরপর শালিসে জুটার পেতার অভিযোগ উঠছে এক স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতার বিরুদ্ধে। তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সঠিক হলে দলীয়ভাবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে।

মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, আমি বিষয়টি জানতে পেরে পুলিশকে অবহিত করেছি। দোষিদের আইনের আওতায় আনার জন্য বলা হয়েছে। এধরনের ঘটনা শালিস মীমাংসা যোগ্য নয়। শালসি মীমাংসার নামে যারা কিশোরীকে জুতা পেতা করেছে তারা গর্হিত অন্যায় করেছে। তাদের বিরুদ্ধে আইসগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়