এস এম নূর:
গভীর রাতে চারদিকে শুনশান নিরবতা। বাগানে ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক। রাতের ওই নিস্তব্ধতা ভেদ করে অ্যাম্বুলেন্সে করোনায় মারা যাওয়া জরিনা বেগমের লাশ এসে পৌঁছায় রূপসা উপজেলার দেয়াড়া গ্রামে। করোনা আতঙ্কে যে যার মতো ঘরের দরজা এটে নিরাপদে ঘুমাচ্ছে। স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বররা সার্বিক কর্মকান্ডের দ্বায়ভার এড়িয়ে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন। মোবাইল ফোনটা পর্যন্ত বন্ধ করে রেখেছেন। মৃত জরিনার পরিবারের লোকজনের চিন্তার শেষ নেই।লোকজন ছাড়া কিভাবে তারা জানাযা ও দাফন সম্পন্ন করবে।ঠিক এমনই সময় রূপসা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাসরিন আক্তারের নেতৃত্বে থানার অফিসার ইনচার্জ মোল্রা জাকির হোসেনসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য এবং স্থানীয় আওয়ামীলীগের ৫/৬ জন কর্মী ছুটে আসেন জরিনার লাশ দাফনে।অল্প সময়ের মধ্যে স্বল্প পরিসরে জানাযা নামাজসহ যাবতীয় ধর্মীয় কার্যাদি শেষ করে রাত পৌনে ৪টায় দাফন সম্পন্ন করেন।
আইচগাতী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি শামীম হাসান তুহিন বলেন, রাত ১২টা ৩৫ মিনিটে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাসরিন আক্তার স্যার আমাকে ফোন করেন। বলেন দেয়াড়া গ্রামের করোনায় অসুস্থ মহিলা মারা গেছেন। আমি চেয়ারম্যান ও মেম্বরকে ফোনে কন্টাক্ট করতে পারছিনা। অনেক চেষ্টা করলাম। রাতেই জানাযা ও দাফন সম্পন্ন করতে হবে।
ইউএনও স্যারের কথা শুনে আমি বললাম, স্যার চিন্তা করবেননা-ইনশাআল্লাহ সবই সময়মত হয়ে যাবে। এ কথা বলে ওই গভীর রাতেই লোকজন ডাকতে থাকি। কিন্তু করোনা আতঙ্কে কেউ এগিয়ে আসেনি। এমনকি স্থানীয় মসজিদের ইমাম সাহেবকে ডাকলে উনি বাথরুমে গিয়ে লুকান। স্থানীয় চেয়ারম্যান আশরাফুজ্জামান বাবুলসহ মেম্বরের সাথে যোগাযোগ করার বহু চেষ্টা করে ব্যর্থ হলাম। অবশেষে দেয়াড়া গ্রামের বুলবুল, আলামীন, রাজাপুর গ্রামের হাফিজ, আরমান ও তরিকসহ আমরা কয়েকজন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কবর খোড়াসহ সার্বিক কর্মকান্ড শুরু করি।
এরমধ্যে অ্যাম্বুলেন্স যোগে জরিনা বেগমের লাশ এবং পৃথকভাবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাসরিন আক্তার, থানার অফিসার ইনচার্জ মোল্লা জাকির হোসেন, মেডিকেল অফিসার শেখ কামরুল হুদা, স্থানীয় ফাঁড়ী ইনচার্জ এসআই ইব্রাহিম এসে উপস্থিত হন। আমাদের কাজের গতিবিধি আরো বেড়ে যায়। আমরা অবাক হয়ে যাই, একজন নারী অফিসার হয়েও ইউএনও স্যার গভীর রাতে এসে উপস্থিত হওয়ায়। উনি না এসে শুধু নির্দেশনা দিলেও সব কাজ সুষ্ঠুমত হয়ে যেতো। তরপরও উনি দায়িত্বের জায়গা থেকে একটুও সরে দাঁড়াননি।
তিনি বলেন ইউএনও স্যারের একক প্রচেষ্টায় ওই রাতেই রাজাপুর বেলফুলিয়া সালেহা মাদরাসা প্রাঙ্গনে নামাজে জানাযা শেষে রাত পৌনে ৪টায় পার্শ্ববর্তী কবরস্থানে জরিনা বেগমের দাফন করতে সক্ষম হই। জানাযা নামাজে স্থানীয় এক যুবক ও ওসি মোল্রা জাকির হোসেনসহ ৬/৭ জন পুলিশ সদস্য অংশ গ্রহণ করেন।
শামীম হাসান তুহিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ভাবতে অবাক লাগে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রাতে তো ফোন বন্ধ করে রেখেছেন। আবার সকালে এসে আমাদের নানা রকম কটুক্তি করেন। আমরা সরকারি কাজে সহায়তা করে নাকি নিজের নাম কিনেছি, জনপ্রিয়তা বাড়িয়েছি। তার মত একজন দায়িত্বশীল লোকের মুখে এধরণের কথা অত্যন্ত দুঃখজনক।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাসরিন আক্তার বলেন, করোনায় মৃত নারীর লাশ রাতেই দাফন করতে হবে, একারণে আমি কাউকে না পেয়ে শামীম হাসান তুহিনের সাথে যোগাযোগ করি। উনি রাত সোয়া একটায় লোকজন যোগাড় করে দেন। একারণে আমি তাকে ধন্যবাদ জানাই। গভীর রাতে লাশ দাফনের উপস্থিত থাকার ব্যাপারে তিনি বলেন, আমি যেহেতু একটা দায়িত্বশীল জায়গায় রয়েছি, সে কারণে আমি মনে করি প্রথম ঝুঁকিটা আমারই নিতে হবে। তারপর না হয় অন্যদেরকে ঝুুঁকি নিতে বলতে পারবো। সে জন্য সকল ভয়ভীতি উপেক্ষা করে মানবিক কারণে আমি সেখানে উপস্থিত থেকে দাফন করিয়েছি।
এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়
Leave a Reply