এস,এম,মিজান, বরিশাল:
মৃত ব্যক্তির লাশ পরিবহনে কিংবা মুমূর্ষু রোগীর চিকিৎসায় সাহায্যের জন্য র্যাব ও পুলিশ পরিচয়ে মোবাইল ফোনকল বা এসএসএস এর মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার প্রতারক চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে।
ওই চক্রের সদস্যরা লোভনীয় অফার দিয়ে, বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র সরবরাহের কথা বলেও ফেসবুকে অর্থ আদায়ে সক্রিয় রয়েছে। কখনও গভীর রাতে সুমধুর নারী ও পুরুষ কন্ঠে নানা ধর্মীয় ও স্বর্ণালংকার পাইয়ে দেয়ার প্রলোভন দেখানো হয়। আবার নারীরা প্রেমের অভিনয় করেও হাতিয়ে নিচ্ছে অর্থ। কোন সরকারী কর্মকর্তা, কিছু পাইয়ে দেয়ার প্রলোভন, আত্মীয়-স্বজন বিপদে পরেছে, মোবাইলে বিকাশের ফাঁকা ম্যাসেজসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত নিখোঁজ ব্যক্তির সন্ধান দিতে ও দারিদ্র পরিবারের অসুস্থ্য ব্যক্তিদের সাহায্য করার নামে নানাভাবে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রতারনা করে আসছে। বর্তমানে বরিশালে এ ধরনের প্রতারণা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। প্রতারণার চক্করে পরে প্রতিদিনই কোন না কোন এলাকার মানুষ আর্থিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। চক্রটি মোবাইল ফোনে কল দিয়ে কৌশলে বিকাশের মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা।
প্রযুক্তিগত উন্নয়নের সাথে সাথে বরিশালে পাল্লা দিয়ে বেড়ে ওঠা প্রতারক চক্রের দৌরাত্ম্য কোন ক্রমেই রোধ করা সম্ভব হচ্ছেনা। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের সাথে প্রায় প্রতিদিনই নানাধরনের প্রতারণার খবর পাওয়া যাচ্ছে গণমাধ্যমগুলোতে। এসব প্রতারণার বেশিরভাগই হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে।
প্রতারক চক্রের ফাঁদে পরা বরিশাল নগরীল অভিরুচি কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক সৈয়দ রেজাউল কবির জানান, অতিসম্প্রতি তার মোবাইল ফোনে (০১৭১৪-৩১১০৬৪) নাম্বার থেকে ফোন করে বলা হয়, আমাকে চিনতে পারছেন আমি পুলিশের এসআই মিজান। আপনি কোথায় আছেন দোকানে? ভাই আমি একটা সমস্যায় পরেছি যদি একটু সাহায্য করতেন। সমস্যার কথা জানতে চাইলে কথিত এসআই মিজান বলেন, বাথরুম থেকে পরে আপনার ভাবীর পা ভেঙ্গে গেছে, তাকে ডাক্তার দেখাইছি ডাক্তার টেস্ট দিয়েছে। কিন্তু টেস্টের বিল অনেক টাকা আসছে মাত্র সাড়ে তিন হাজার টাকার সমস্যায় পরে গেছি। যদি টাকা দিতেন বাসায় গিয়ে টাকাটা পাঠিয়ে দিতাম। এসআই মিজানের দেয়া বিকাশের (০১৯১২-৯৩৭৯২৮) নাম্বারে টাকা পাঠিয়ে দেয় ওই ব্যবসায়ী। টাকা পাঠনোর পরে ফোন করে আবার রেজাউল কবিরকে ধন্যবাদও জানানো হয়। পরেরদিন টাকা ফেরত না পাঠানোর কারনে রেজাউল কবির সেই কথিত এসআই মিজানকে ফোন করলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে তিনি বুঝতে পারেন প্রতারনার শিকার হয়েছেন। তিনি জানান, আমার হোটেলে পুলিশ, সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দসহ অনেকেই আসেন। অনেকের সাথেই ভাল সম্পর্ক। সে কারনে ব্যস্ততার মাঝে ফোন করায় তিনি সরল বিশ্বাসে অর্থ পাঠিয়েছিলেন।
প্রতারনার ফাঁদ থেকে রক্ষা পাওয়া নগরীর খান ট্রেডার্সের স্বত্তাধীকারি মেহেদী হাসান খান জানান, নগরীর রুপাতলি র্যাব অফিসের এসআই মাসুদ পরিচয় দিয়ে তার কাছে (০১৯১১-৭৬৫১৯২) নাম্বার থেকে ফোন দিয়ে বরিশালের বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তির পরিচয় দিয়ে বলা হয়, ঢাকা আনজুমান থেকে বরিশালের বাকেরগঞ্জ এলাকার এক ব্যক্তির লাশ টাকার অভাবে আনতে পারছেন না। এজন্য তার কাছে সাহায্য চাওয়া হয়। আর সাহায্যের টাকা পাঠানোর জন্য একটি বিকাশ নাম্বারও দেয়া হয়েছিলো। পরবর্তীতে মেহেদী সমস্যার কথা শুনে মৃত ব্যক্তির নাম ও ঠিকানা জেনে ঢাকার আনজুমান কর্তৃপক্ষের সাথে ফোনে যোগাযোগ করে জানতে পারেন পুরো বিষয়টি প্রতারনা। একটি প্রতারক চক্র বিভিন্ন ব্যক্তিদের কাছ থেকে লাশ পরিবহনের কথা বলে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এ ব্যাপারে আনজুমানের ডিউটি অফিসার মোস্তফা কামাল জানান, প্রতারক চক্রটির বিরুদ্ধে প্রায় প্রতিদিনই এ ধরনের একাধিক অভিযোগ আসে।
গৌরনদী মডেল থানার ওসি (তদন্ত) মোঃ আফজাল হোসেন জানান, গত ১১ অক্টোবর উপজেলার শাহজিরা গ্রামের আনসার কমান্ডার আজিজুর রহমান চুন্নুর পুত্র ও নবম শ্রেনীর ছাত্র আসাদুর রহমান সৈকত (১৪) রহস্যজনক ভাবে নিখোঁজ হয়। এনিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর কেরানিগঞ্জ থানার এসআই পরিচয়ে এক ব্যক্তি তাকে ফোন দিয়ে সৈকতের মা রুমা বেগমের নাম্বার নিয়ে তার কাছে বলেন, সৈকত সড়ক দূর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তাকে বাঁচাতে হলে তাৎক্ষনিক টাকার প্রয়োজন। এজন্য একটি বিকাশ নাম্বারও দেয়া হয়েছিলো। পরবর্তীতে বিষয়টি রুমা বেগম তাকে (ওসি আফজাল) জানানোর পর তিনি সংশ্লিষ্ট থানার ওসির মাধ্যমে জানতে পারেন পুরো বিষয়টি প্রতারনা। রুমা বেগম জানান, তার ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারে একাধিক ব্যক্তি ফোন দিয়ে সৈকতকে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য মুক্তিপনও দাবি করে। এ বিষয়ে প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের স্মরনাপন্ন হয়েও তিনি কোন সুফল পাননি।
মোবাইল ফোনের মাধ্যমে প্রতারনার বিষয়ে জানতে চাইলে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র শাখাওয়াত হোসেন জানান, এসব প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। বরিশাল র্যাব-৮ এর অধিনায়ক হাসান রাজীব আল ইমন বলেন, আবেগে না পরে প্রতারক চক্রের হাত থেকে রেহাই পেতে সবাইকে সচেতন হতে হবে। আমরা সকলে সচেতন হলে প্রতারক চক্রটি থাকবেনা। তিনি আরও বলেন, র্যাবের কাছে প্রতারনার একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এনিয়ে র্যাব প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে কাজও শুরু করেছেন।
এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়
Leave a Reply