মঙ্গলবার, ০৬ জুন ২০২৩, ০৫:২২ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
সাবেক সরকারি কর্মকর্তার কোটি কোটি টাকার নামে বেনামে সম্পদের পাহাড় তুরাগে মায়ের সাথে অভিমান করে কিশোরীর আত্মহত্য পূবাইলে সমবায় অফিসে দুর্ধর্ষ চুরি বনানী পুলিশ ফাঁড়ির নিকটেই অবৈধ ফুটপাতের দোকান, নেপথ্যে ইন্সপেক্টর একরামের আতাত বাজেট ডিব্রিফিং সেশন সংসদ সদস্যগণকে বাজেট সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ ধারণা দিচ্ছে : স্পীকার বাসযোগ্য সুন্দর পরিবেশ গড়তে জনসচেতনতার কোন বিকল্প নেই : সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক কালিহাতীতে মাদ্রাসার ভূমি জবরদখল : উদ্ধারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি নীলফামারীতে বিশ্ব পরিবেশ দিবসে র‌্যালি, আলোচনা সভা ও পুরষ্কার বিতরণ দেশকে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত থেকে রক্ষা করতে হলে সম্মিলিত প্রচেষ্টা দরকার  : তথ্যমন্ত্রী মিরপুরে জনতা-পুলিশ সংঘর্ষ: ২ মামলা, আসামি সহস্রাধিক

যমুনার বুকে ধান চাষ

Reporter Name
  • Update Time : শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০১৯
  • ৩৮ Time View

মো: নাসির উদ্দিন, ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি:

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ থেকে শুরু হয়ে টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জের বুক চিরে গোপালগঞ্জ ও ফরিদপুরের গোয়ালন্দে পদ্মায় গিয়ে মিলিত হয়েছে যমুনা নদী। এক সময় যমুনা নদীতে চলতো বড় বড় স্টিমার, জাহাজ, লঞ্চসহ নৌ-পথের পরিবহন। কিন্তু কালের বিবর্তনে প্রমত্তা যমুনা তার যৌবন হারিয়ে এখন মৃতপ্রায়। নদীর গতিপথ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে একদিকে যেমন বাস্তুহারা করছে চরাঞ্চলের মানুষকে, অন্যদিকে শুষ্ক মৌসুমে যমুনা মরা খালে পরিণত হয়েছে।স্থানীয়রা জানান, দুই যুগ আগেও যমুনার পূর্ণ যৌবন ছিল। কিন্তু দেশের সর্ববৃহৎ বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের পর যমুনা নদী অস্তিত্ব হারাচ্ছে।

 

যে কারণে বঙ্গবন্ধু সেতুর তলদেশে এখন চাষাবাদ হচ্ছে বোরো ধান। শত শত একর জমিতে শোভা পাচ্ছে বোরো ধানের চাষ।বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণে নদী শাসনের কারণে তার স্বাভাবিক গতিপথ সেতুর পিলারের মাধ্যমে বাধাপ্রাপ্ত হওয়ায় উজানে অতিরিক্ত ভাঙন দেখা দেয়। যার ফলে নদীর গভীরতা কমে চরের প্রবণতা বেড়ে গেছে। দীর্ঘকাল ধরে নদী শাসন না হওয়ায় গতিপথ পরিবর্তন হয়ে শুষ্ক মৌসুমে ধু-ধু বালু চরে রুপ নিয়েছে যমুনা। আর এসব জেগে উঠা চরগুলোতে শুষ্ক মৌসুমে চাষাবাদ হচ্ছে তিল, তিসি, কাউন, ডাল, চিনাবাদাম ভূট্টাসহ নানা মৌসুমী ফসল।বঙ্গবন্ধু সেতুর উত্তরাংশ টাঙ্গাইল জেলার ভূঞাপুরের অর্জুনা, গাবসারা, ফলদা, গোবিন্দাসী ও নিকরাইল ইউনিয়নের পশ্চিম সীমানা দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে এই নদী।

 

এককালে অথৈ পানিতে থৈ থৈ করা নদী আজ পৌষ মাস থেকেই পানি শুকিয়ে মাইলের পর মাইল ধু-ধু বালু চরে রুপ নিয়েছে। বঙ্গবন্ধু সেতু তৈরির পূর্বে টাঙ্গাইল দিয়ে সিরাজগঞ্জ হয়ে উত্তরবঙ্গে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম ছিল এই নদী। ফেরি, যন্ত্রচালিত নৌকার মাধ্যমে নদী পার হয়ে উত্তরবঙ্গে যাতায়াতের এটাই ছিল একমাত্র অবলম্বন।দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর গরুর হাট গোবিন্দাসী গরুর হাট জমে উঠেছিল যমুনা নদীকে কেন্দ্র করে। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে নৌ-পথে গরু আসতো এ হাটে। এ হাটটির মাধ্যমে হাজার হাজার মানুষের জীবিকা নির্বাহ হতো। যমুনার নাব্য কমে যাওয়ায় এ হাটটিও যেন মরে গেছে। সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব।

 

যমুনার মাছ সারা দেশে সমাদৃত। এখানে পাওয়া যেত লোভনীয় ইলিশ, বোয়াল, চিংড়ি, পাবদা ও গোলসাসহ নানা প্রজাতির মাছ। নদীর নাব্য কমায়, অতি দ্রত নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে মাছের আকাল। নদীতে মাছ ধরে যারা জীবিকা নির্বাহ করতো তারা আজ অন্য পেশায় নিজেদের নিয়োজিত করেছে। জাল দিয়ে মাছ ধরা জেলে বাবলু হালদার বলেন ‘কি আর কমু খারি ভর্তি মাছ ধরতাম, আজ খালইয়ের তলাই ভরতে পারি না।’ নদীতে পানি থাকে না এবং সঠিক সময় পানি আসেও না, তাই মাছও আসে না।

 

বর্তমানে এ নদীতে মাছের খুব আকাল।যমুনা নদীতে বঙ্গবন্ধু সেতু চালু হওয়ার পর দূরপাল্লার যাতায়াত সহজ হলেও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে স্থানীয়দের। নদী তীরবর্তী টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জের চরাঞ্চলের লোকজন যেখানে নৌকায় চড়ে বাড়ির ঘাটে উঠা-নামা করতো, সেখানে আজ মাইলের পর মাইল হেঁটে চলাচল করতে হয় তাদের। বর্ষাকাল ছাড়াও যেখানে এ নদীতে সারা বছর পানি থাকতো সেখানে আজ ধু-ধু বালু চর। নৌকাযোগে অল্পসময়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাতায়াতের যে সুবিধা মানুষ ভোগ করতো সেখানে আজ পোহাতে হয় সীমাহীন দুর্ভোগ।নৌকার মাঝি সবজাল বলেন ‘প্রমত্তা যমুনা আজ হাহাকার বালু চর। অতিরিক্ত ¯্রােতের কারণে এই নদীতে নৌকা বাইতে সাহস পাইতাম না, সেখানে আজ নৌকার হালও ধরতে হয় না, এমন অবস্থা যমুনার। কি নদী ছিল আজ কি হয়ে গেছে। যে ঘাটে বড় বড় ফেরি বাঁধা থাকতো সেখানে আজ বাঁধা থাকে গরু।যমুনা নদীর উপর ব্রিজ হওয়ায় ভূঞাপুরের গোবিন্দাসীর ফেরিঘাট উঠে গেছে অনেক আগেই। এখন আর আগের মতো নৌকাও চলে না। যাতায়াতের বিকল্প হিসেবে যমুনার চরাঞ্চলে শুষ্ক মৌসুমে একমাত্র ভরসা ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেল।যমুনার এ চরাঞ্চলে রাস্তা-ঘাট নেই বললেই চলে। কিন্তু ধু-ধু বালু চরে মোটরসাইকেল চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছে কয়েক’শ পরিবার।ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী, নিকরাইল, গাবসারা ও অর্জুনা ইউনিয়নের চরাঞ্চলে গিয়ে দেখা গেছে, চর ও নদী এলাকার যেসব গ্রামে শুষ্ক মৌসুমে মাইলের পর মাইল হেঁটে যাতায়াত করতে হতো চরের মানুষকে। উৎপাদিত পণ্য আনা নেয়া করতে হতো হেঁটে। সেসব জায়গায় ঘোড়ার গাড়ির পাশাপাশি মোটরসাইকেলে যাতায়াত করছে লোকজন।ভূঞাপুর উপজেলার চারটি ইউনিয়নের চরাঞ্চলে প্রায় লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। স্কুল, মাদরাসা, হাসপাতাল, ব্যাংক-বিমা, কমিউনিটি সেন্টার ও এনজিও প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত লোকজন প্রতিদিন চরাঞ্চলে যাতায়াত করে।

 

এসব মানুষের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা মোটরসাইকেল। তবে, চরের অনেক মানুষ এখনো হেঁটেই বিশাল চর পাড়ি দেয়।গাবসারা ইউনিয়নের পুংলীপাড়া মোটরসাইকেল চালক আইয়ুব বলেন, সংসারে তিন সন্তান রয়েছে। মোটরসাইকেল চালানো তার পেশা। আগে তিনি ইটভাটায় কাজ করেছেন। এখন তিনি প্রতিদিন মোটরসাইকেল চালিয়ে ৮-৯শ’ টাকা আয় করেন। চরাঞ্চলের অনেকেই জানান, চরে ঘোড়ার গাড়ির পাশাপাশি মোটরসাইকেল চলাচল করায় চরের মানুষের দুর্ভোগ অনেকটা কমেছে।যমুনার নাব্য কমে যাওয়ায় সেখানে এখন প্রায় পানি শূণ্য। জেগে ওঠা চরগুলোতে চাষাবাদ করছে চরাঞ্চলের চাষিরা।

 

ফলে এখানে মানুষের বসতির সঙ্গে সঙ্গে অর্থনীতিও চাঙ্গা হচ্ছে। এর সঙ্গে সেখানে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু গবাদি পশুর খামার। এতে পাল্টে যাচ্ছে টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জ জেলার চরাঞ্চলের অর্থনীতি। আজ থেকে ২০ বছর আগেও যমুনার তীব্রতা ছিল ভয়াবহ। তখন কেউ চিন্তাও করতে পারেনি যমুনার বুকে এক সময় চাষাবাদ হবে। কিন্তু যমুনা নদীতে ‘বঙ্গবন্ধু সেতু’ স্থাপিত হওয়ার পর থেকে এর নাব্য কমতে থাকে। যমুনার বুক এখন ফসলে ভরা। জেগে উঠা ধু-ধু বালুচরে এখন উঠতি বোরো ধান শোভা পাচ্ছে।তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে যমুনার হারানো গৌরব ফেরাতে এখনই কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়