শের-ই-গুলঃ মত প্রকাশের জন্য বস্তুনিষ্ঠ তথ্য সংগ্রহ ও প্রকাশের নিমিত্ত্বে সাংবাদিকতার বিকল্প নেই। নিঃসন্দেহে তারা জাতির বিবেক, সর্বদা সত্য সংবাদ, মূল ঘটনা, জাতির সামনে প্রকাশ করেন বিধায় সবাই জানতে পারে আসল স্বরুপ। খুলে যায় প্রকৃত মুখোশধারীর চেহারা। কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরে পুকুড়ে ব্যাড়ের ডিম ফোটালে যেমন ব্যাঙ্গাচিতে ভড়ে যায় এবং পানি ব্যবহার উপযোগী থাকে না। রাজধানীর উত্তরায় অপ-সাংবাদিক আর প্রেসক্লাবের অবস্থাও ঠিক তেমনই। মূল সাংবাদিকরা এই ব্যাঙ্গাচির মত সাংবাদিকদের কারনে তাদের কাজ করার পরিবেশ হারাচ্ছে, এই পেশার প্রতি নষ্ট হচ্ছে তাদের মনোবল। অপ-সাংবাদিকরা এবং মোড়ে-মোড়ে গড়ে ওঠা প্রেস ক্লাব নিজেদের মধ্যে ছড়াচ্ছে বদনাম, সমালোচনা আর করছে কাঁদা ছোড়াছুড়ি, সব মিলিয়ে একটি হযবরল অবস্থা। উত্তরা আভিজাত এলাকায় অনেক মূলধারার সাংবাদিকরা থাকে, বেশ কিছু ভালো পত্রিকা ও অনলাইন নিউজ-টিভি চ্যানেলও রয়েছে। সাংবাদিকদের এহেন পরিস্থিতির কারনে তারাও হতবম্ভ হয়ে কিংকর্তব্যবিমুড় অবস্থার মধ্যে আছে। সব কিছু এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। আগের মত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাদের উপস্থিতি কমে গেছে। তাই পাঠক হারাচ্ছে সত্যিকারের ঘটনা, ভাষাগত জ্ঞান, শিক্ষনীয় বক্তব্য। অপরদিকে সেখানে দখল করেছে অনলাইন পত্রিকা, অনলাইন টিভির বিশাল বিশাল চাপাবাজ সাংবাদিকরা। তাদের এক একটা আইডি কার্ড বিক্রি হয় পাঁচ থেকে দশ হাজার টাকায়। জীবনে কোথাও সাংবাদিকতা করে নাই, তাদের লেখা একটি সংবাদও কোনদিন কোন পত্রিকায় প্রকাশিত হয় নাই, তেনারা এখন সম্পাদক। অথচ তথ্য মন্ত্রনালয়ে যোগাযোগ করে জানা যায় এ যাবৎকালে অনলাইন টিভি- পত্রিকার কোন অনুমোদন দেয়া হয়নি। বিষয়টি ভবিষ্যৎ এর জন্য রাখা হয়েছে। এদিকে যে হারে অপ-সাংবাদিক বাড়ছে তাতে বাংলাদেশে সবাই একদিন সাংবাদিক হতে পাড়বে, একজনও বাকি থাকবেনা।
কারন বসত মজার বিষয় ফেসবুক, ইউটিওবে কোন প্রকার পত্রিকা বা টিভির নামে একটি আই ডি খুলতে পাড়লেই আপনিও হতে পারবেন গর্ভবতী সম্পাদক। আর দেশব্যাপি বিক্রি করতে পারবেন আপনার আইডি কার্ড। আপনি নাম লিখতে কলম ভাড়লেও সমস্যা নেই। মাসে মাসে পাবেন টাকা, আপনি বেশ পীর সাহেবের মত খাবেন-দাবেন, ঘুমাবেন আহা কি মজা, কত্ত বড় সাংবাদিক। আর যেই এলাকায় অফিস করবেন তার আশপাশে গড়ে ওঠা বিভিন্ন অসামাজিক প্রতিষ্ঠান থেকে পাবেন মাসিক হাদিয়া। এক জড়িপে দেখা যায়, উত্তরায় এখন অপ-সাংবাদিক যারা পূর্বে মুদির দোকানী ছিলেন, টাইলস, সেনেটারী মিস্ত্রি ছিল কেউ কেউ ফুটপাতে ভাত বিক্রি করত, ছিচকে রংবাজ সহ পতিতাদের দালাল, ইয়াবার ডিলার, খুচরা বিক্রেতা এরকম সব মিলিয়ে আনুমানিক প্রায় দুইশত পঞ্চাশ থেকে তিনশত হবে। অনলাইন টিভি, অনলাইন পত্রিকা আছে প্রায় দুইশত চল্লিশ থেকে পঞ্চাশটির মতো। উত্তরায় বিভিন্ন নামে প্রেস ক্লাব হবে ত্রিশ থেকে পয়ত্রিশটির মতো। এই যদি হয় উত্তরার চিত্র, সারাদেশের হিসেব করলে দেখা যাবে, আমাদের বাড়ির পয়তাল্লিশ বছর বয়সী পাগলা মকবুল যে কিনা মাঝে মাঝে লুঙ্গী খুলে এখনো খালে লাফ দেয়, অকারনে হাসে, সেও দাবী করে না বসে যে, আমিও সাংবাদিক।
এ দেশে সহজে কোন আইন কার্যকরী হয়না। দুই-চার-পঞ্চাশজন না মরলে সরকারের টনক নড়ে না। বড় কোন বোমা ব্লাস্ট না হলে জঙ্গী নিয়ে আলোচনা হয়না। শুনেছিলাম মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন সাংবাদিকদের একটি আইনের আওতায় আনা হবে। অপ-সাংবাদিকতা দূর হয়ে মূল সাংবাদিকরা ফিরে পাবে তাদের উপযুক্ত পরিবেশ। প্রধান মন্ত্রীকে অসংখ্য ধন্যাবাদ তার সুন্দর উদ্যোগের জন্য, প্রয়োজন এখন বাস্তবতার। না জানি সেই দিন কবে আসবে, বুক ফুলিয়ে বলতে পারব আমি সাংবাদিক, আমি জাতির বিবেক, খবরের পিছনের খবর প্রকাশে আমি কলম যোদ্ধা। আমার হৃদয়ে বাজে বঙ্গবন্ধুর জ্বালাময়ী ভাষন, আমি চাই বস্তুনিষ্ট তথ্য প্রকাশের পূর্ণ স্বাধিনতার শাসন।
এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়
Leave a Reply