মাসুদ রানা রাব্বানী, রাজশাহী :
রাজশাহী মহানগরীতে রাত যত বাড়ে দামি দামি দ্রুতগামী বাইকারদের উৎপাত তত বাড়ে। কেউই যেন স্বাভাবিক স্পিডে বাইক চালাতে পারে না। চোখের পলকেউ ভা-ভু শব্দে দ্রুত গতিতে বাইক চালিয়ে যায়, উঠতি বয়সি তরুণ, কিশোর ও যুবকরা। ফলে প্রায় ঘটেছে দূর্ঘটনা।
শুক্রবার (৭ এপ্রিল) দিনগত রাত ১০টায় মহানগরীর রাজপাড়া থানার ডাবতলা মোড়ে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অনিক (২০) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় মোটরসাইকেল আরোহী মারুফ (২৫) নামের এক যুবক গুরুত্বর আহত হয়েছে। পরে তাকে উদ্ধার করে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা উভয়েই একই থানার ডাসপুকুর এলাকার বাসিন্দা।
এর আগে, বুধবার (৫ এপ্রিল) রাত ১টা ২০মিনিটি। নগরীর তালাইমারী নূপুর মহিলা ছাত্রীনিবাসের সামনের সড়কে এক যুবকের মাথায় পালি ঢালতে দেখা যায় দুই যুবককে।
পাশে (ঝুঁঁশর এ৬জ) ব্র্যান্ডের দূর্ঘটনা কবলিত নতুন একটি মোটরসাইকেল। সেখানে উপস্থিত একাধিক স্থানীয়রা জানায়, হেলে দুলে প্রচন্ড স্পিডে বাইক চালিয়ে যাওয়ার সময় হটাৎ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তায় মাঝের গ্রীলের সাথে কয়েকবার ধাকা খায় এই যুবক। এতে তার মাথা, হাত ও পায়ে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে গুরুত্বর আহত হয়।
দেখা যায়, আহত যুবককে দুইজন যুবক ধরাধরি করে অটো-রিক্সাতে তুলে রওনা দেয় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে। ওই সময় বাইকের মালিক যুবরাজ সরকার (২৬)। সে তার সঙ্গীদের উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বলছে, আমার নতুন বাইক। কেনা হয়েছে মাত্র ৩দিন। এই বাইক এ্যাকসিডেন্ট করে ক্ষতিগ্রস্থ করেছে রেজুয়ান। বাইক আমি নিব না। নতুন বাইক দিতে হবে। নইলে খবর আছে বলে দে। এসব কথা বলে তিনিও অন্য একটি বাইক ড্রাইভ করে শহরের দিকে চলে যায়।
ঘটনাস্থলে রাবির এক শিক্ষার্থী দূর্জয় জানায়, আহত ছেলেটির নাম রেজুয়ান (২৬), তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা সিরামিক বিভাগের ২য় বর্ষের ছাত্র। আর বাইকের মালিকের নাম যুবরাজ সরকার। তিনি নগরীর একটি রেষ্টুরেন্টের মালিক।
প্রত্যাক্ষদর্শী ও একাধীক স্থানীয়রা জানায়, তালামারী টু সাহেববাজারের আলোকিত রাস্তাটি রাত বাড়ার সাথে সাথে ভয়ংকর ওঠে। অল্প বয়সি তরুণ, কিশোর ও যুবকদের আনাগোনা বাড়ে। সেই সাথে বাড়ে অসংখ্য দ্রুতগতি সম্পন্ন বাইকের যাতায়াত।
উঠতি বয়সি ছেলেরা এতই দ্রুত গতিতে বাইক চালিয়ে যায় যে, সামনে পড়লে রক্ষা নাই। প্রায় ঘটছে দূর্ঘটনা। আহত হচ্ছে। মেডিকেলে যাচ্ছে। কিন্তু কমছে না বাইকারদের বাইকের গতি। শুধু এই সড়কই নয়। নগরীর প্রত্যকটি আলোকিত সড়কের একই অবস্থা। বাইকারদের বাইক ড্রাইভ করা দেখলে মনে হবে, সে কোন রেসলিং ময়দান দিয়ে যাচ্ছে। আবার কেউ কেউ হেলে দুলে কাত করে রাস্তায় শুইয়ে বাইক ড্রাইভ করে। ভাবখানা দেখলে মনে হবে, সড়কটি তার বাড়ির উঠান।
স্থানীয় পরিবহন ব্যবসায়ী মোঃ বুলবুল আহমেদ বলেন, রাত যত বাড়ে বেপরোয়া বাইকারদের আনাগোনাও তত বাড়ে। এসব বাইকারদের অধিকাংশদেরই ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে বলে মনে হয় না। তাছাড়া বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশোনা করতে এসেছে রাজশাহীতে। তাদের অভিভাবকরা ভাবছেন ছেলে মেয়েরা পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে। বুকভরা আশায় রয়েছেন ভাল রেজাল্ট করে বড় বড় অফিসের কর্মকর্তা হবে ছেলেমেয়েরা। কিন্তু ছাত্রদের বড় একটা অংশ গাভির রাত পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন স্থানে আড্ডা, গালগল্প, আর বাইক নিয়ে ছোটাছুটি করে সময় কাটাচ্ছে গভীর রাত পর্যন্ত। এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি দেয়া উচিৎ বলে মনে করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, গভীর রাতে শহর জুড়ে কিসের এত দাপাদপি। আমার মতো রাস্তার পাশে যাদের বাড়ি, তাদের প্রত্যেকেরই ঘুমের সমস্যা হয়।
এ ব্যাপারে আরএমপি ট্রাফিক বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) অনিবার্ণ চাকমা এর মুঠো ফোনে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমাদের ট্রাফিক ব্যবস্থপনা অনুযায়ী রাত ১১টার পর থেকে রাস্তায় কোন ট্রফিক সার্জেন্ট থাকে না। সেই সুযোটাকে কাজে লাগিয়ে উঠতি বয়সি ছেলেরা বাবা-চাচার বাইক নিয়ে রাস্তায় বের হয়। সেক্ষেত্রে থানা ও ফাঁড়ির পুলিশরা ভাল ভূমিকা পালন করে থাকেন। এতে কোন সন্দেহ নাই। তারা সন্দেহ ভাজনদের থামিয়ে বাইকের কাগজপত্র চেক করেন। কাগজপত্র বা ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকলে বাইক নিয়ে থানায় আটকে রাখে। পরেন দিন আমাদের সাজেন্ট গিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যস্থা গ্রহণ করেন। আবার অল্প বয়সি ছেলে হলে তাদের বাবা-মাকে ডেকে সতর্ক করা হয় এবং মুচলেকা নেয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, একটি দূর্ঘটনা সারা জিবনের কান্না। তাই রাজশাহীর বাইরে থেকে আসা শিক্ষার্থীদের অভিভাবক এবং নগরীর অভিভাবকদের উচিৎ উঠতি বয়সি নিজ নিজ ছেলেদের উপর নজর রাখা।
এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়
Leave a Reply