(রমজান আসলেই অন্যান্য দেশে ধর্মীয় অনুভুতিকে সামনে এনে তাদের সাধ্যমতো নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম কমিয়ে দেয়। অথচ বাংলাদেশে ধর্মীয় মূল্যবোধ নিয়ে সবাই বড় বড় কথা বললেও নিজেদের স্বার্থের বিষয়ে পূর্বের চেয়েও বেশি বেপরোয়া হয়ে রমজান মাসে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্য বৃদ্ধি করে হাতিয়ে নেয় অবৈধ ভাবে অর্থ।)
শের ই গুল :
দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের বাজারের দ্রব্যমূল্যের উঠানামার বিষয়টি নতুন কিছু নয়। তবে রমজান, ঈদ বা অন্য উৎসবে যে সব পণ্যের চাহিদা বাড়ে, সে সব পণ্যের দামও বাড়ে। এটাই যেন বাংলাদেশের বাজারের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য হয়ে গেছে। বাংলাদেশে যেকোন উৎসব এলে ব্যবসায়ীদের কুপ্রবৃত্তি জেগে উঠে। এক ধরনের লুণ্ঠনের মানসিকতা জেগে উঠে। ভোক্তাকে তারা কেবল উপার্জনের উপাদান মনে করে। যেভাবেই হোক, পণ্যের মূল্য বেশি নিয়ে বা নিম্নমানের পণ্য দিয়ে বেশি মূল্য নেয়া, ভোক্তাদের ঠকানো ইত্যাদি উপায়ে টাকা রোজগারের কুপ্রবৃত্তি জেগে উঠে।
রোজা এলেই সরবরাহ ও চাহিদার মধ্যে তারতম্যের কারণে নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতি হয়। অনেক ক্ষেত্রে দ্রব্যমূল্য অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যায়। কিন্তু অন্যান্য দেশে দেখা যায়, রমজানে নিত্যপণ্যের দাম কমে। আমাদের দেশে বাড়ে। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ী কী করতে পারেন, তা জানালে তাদের পরামর্শ ও তথ্যের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে, এরকম বক্তব্য সরকার পক্ষের অনেকের নিকট থেকে শুনলেও বাস্তবতায় এসে দেখা যায় তাদের কথার কোন দাম নেই। পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। কিন্তু নীতি নির্ধারকরা মুখে যা বলছে বাস্তবে এসে দেখা যাচ্ছে তারাই বিভিন্ন সিন্ডিকেট তৈরি করে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়িয়ে নিজেরা ফায়দা হাসিল করছে। বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অনেক দক্ষ।
ক্রেতারা তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে। পণ্য পরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধে সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথেষ্ট সচেতনভাবে কাজ করছে। আবার, অসাধু ব্যবসায়ীরা যেন সুযোগ নিতে না পারে, সে ব্যাপারে বিএসটিআইসহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে তৎপর হতে হবে। চলছে অভিযান, হচ্ছে জরিমানা, কিন্তু ফলাফল শূন্য। জরিমানা দিয়ে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা অবৈধ ব্যবসার সার্টিফিকেট হাসিল করছে। দ্বিতীয়বার কোন অভিযানে কেউ আসলে তারা জানা যায়, এক মুরগি কতবার জবাই দিবেন!
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান দৈনিক আমার প্রাণের বাংলাদেশকে বলেন, করোনা মহামারির কারণে মানুষের আয় কমে যাওয়া ও কর্মচ্যুতির ফলে অধিকাংশ মানুষ ঋণ করে এবং সঞ্চয় ভেঙ্গে জীবন নির্বাহ করে আসছে। এ পরিস্থিতিতে খাদ্যদ্রব্যের দাম বেশ কয়েক দফায় বেড়েছে, দরিদ্ররা নিদারুণ কষ্টে আছে এবং খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা আরও প্রকট আকার ধারণ করবে এমনটাই আশঙ্কা করা যাচ্ছে। দ্রব্যমূল্য নাগালে রাখতে আমদানীনির্ভর ভোগ্যপণ্য বন্দর থেকে দ্রুত খালাস করা, পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি ও যানজট নিরসন, দক্ষ ও পর্যাপ্ত বাজার মনিটরিং, নিয়মিত ন্যায্য মূল্য তালিকা হালনাগাদ ও তা কার্যকর করা সময়ের দাবী।
কিন্তু সরকার এই কাজগুলো করতে বার বার ব্যর্থ হয়ে আসছে। বিগত সরকার গুলোও এই একই পন্থার মধ্যে ছিল। রমজান আসলেই অন্যান্য দেশে ধর্মীয় অনুভুতিকে সামনে এনে তাদের সাধ্যমতো নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম কমিয়ে দেয়। অথচ বাংলাদেশে ধর্মীয় মূল্যবোধ নিয়ে সবাই বড় বড় কথা বললেও নিজেদের স্বার্থের বিষয়ে পূর্বের চেয়েও বেশি বেপরোয়া হয়ে রমজান মাসে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্য বৃদ্ধি করে হাতিয়ে নেয় অবৈধ ভাবে অর্থ। যে সকল জিনিস দেশে পর্যাপ্ত উৎপাদন হচ্ছে এবং উৎপাদনস্থলে এতো বেশি ফলন হয়েছে বিক্রি করেও চাষীরা শেষ করতে পারছেনা।
কিন্তু এসব নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসও যা আমদানী করতে হয়নি এর পিছনে খরচ হয়নি কোন জ্বালানি, সবকিছুই নিয়ন্ত্রণের মধ্যে তাহলে কিভাবে এরকম পণ্য সাধারণ মানুষের গলায় পাড়া দিয়ে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফা লাভের কারণে বেশি দাম নিচ্ছে। সরকার এসব ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়ে সাধারণ মানুষের কাছে উপহাসের পাত্রে পরিণত হয়েছে। বর্তমান সরকার জঙ্গীদমন সহ বিশাল বিশাল দৃশ্যমান পদ্মা সেতুর মতো উন্নয়ন করলেও দ্রব্যমূল্যকে কন্ট্রোলে আনার বিষয়ে বার বার ব্যর্থ হয়ে আসছে।
এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়
Leave a Reply