শওকত আলী মন্ডল, রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি :
কুড়িগ্রামের রৌমারী রাজিবপুর সীমান্ত দিয়ে অঝোড়ে দেশে ঢুকছে বড় বড় চালান মাদক ও গরুর। সীমান্তের ২১ টি পয়েন্ট দিয়ে প্রায় প্রতিরাতে আসে ভারতীয় মাদক ও গরুর চোরাচালান। রৌমারী ও রাজিবপুরে আনাচে কানাচে ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে মাদক ব্যবসা ও সেবন। প্রতিদিন ইয়াবা, গাঁজা, ফেন্সিডিল ও মদ রৌমারী থেকে বিভিন্ন বাহনে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। সহযোগীতায় অসুধপাই বিজিবি, এফএস ও পুলিশের (পাইলট) দালাল চক্র।
স্থানীয় লোকজন বলছেন, কিছু অসুধপাই বিজিবি, এফএস ও পুলিশের সহযোগীতায় সীমান্ত দিয়ে মাদক ও গরুর চোরাচালান আসছে। এতে মাদকের ছড়াছড়িতে হাট-বাজার ও বাড়ির চিপেচাপিতেই অবাধে এসবের বেচাকেনা হচ্ছে। সেবন করছে কিশোর থেকে যুবক ও মধ্য বয়সীরাও। ক্ষতি হচ্ছে, পরিবারের, সমাজের ও এলাকার। পুলিশ ও র্যাবের হাতে মাঝে মধ্যে মাদকের চালান আটকের কথা শোনা গেলেও, কিন্তু সীমান্তরক্ষী বাহিনী তাদের হাতে মাদক বা গরুর চালান আটকের কথা শোনা যায় না। এখানেই কবি নিরব?
ভারতের আসাম ও মেঘালয় রাজ্যের সীমানা ও বাংলাদেশের সাহেবের আলগা থেকে পাথরেরচর পর্যন্ত ৪০ কিঃ মিঃ দীর্ঘ পথ। এই সীমান্ত পথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। এ জন্য রৌমারী রাজিবপুর হয়ে উঠেছে মাদক চোরাচালানের নিরাপদ রুট। সীমান্তে রাতে বিজিবির টহল জোরদার না থাকায় এবং অসাধুপায়ে কিছু বিজিবি, এফএফ ও পুলিশের দালালের মাধ্যমে বিপুল পরিমান গরুর সাথে মাদকের চালান আসে। এ চালান ব্যবহার হচ্ছে নারী ও যুবকদের মাধ্যমে।
ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেষা গ্রামগুলোতে গড়ে উঠেছে মাদক কারবার কিছু সি›িডকেট চক্রের শক্তিশালী নেট ওয়ার্ক। এই নেটওয়ার্কের মধ্যে ইয়াবার ট্রানজিট প্রায় ২১ টি পয়েন্ট দিয়ে চালান আসছে যেমন, দাঁতভাঙ্গার সাহেবের আলগা, ডিগ্রীরচর, খেতারচর, ছাটকড়াইবাড়ী, ধর্মপুর, শৌলমারীর চরবোয়ালমারী, নতুন শৌলমারী, চরের গ্রাম, গয়টা পাড়া, রৌমারীর মোল্লারচর, খাটিয়ামারী, ভুন্দরচর, চুলিয়ারচর, ঝাউবাড়ি, যাদুরচরের, বকবান্দা, উত্তর আলগারচর, দক্ষিণ আলগারচর, রাজিবপুরের কালাইরচর, বালিয়ামারীসহ মাখনেরচর, পাথরেরচর।
চোরাকারবারিদের সাথে সখ্যতা রেখে দালাল হিসেবে কাজ করছেন, বিজিবির এফএসএর দালাল (পাইলট) এলাকা ভিত্তিক পয়েন্ট গুলি আলগারচর উত্তর আলগারচর শরবত আলীর ছেলে বাবু মিয়া, চুলিয়ারচর, ঝাউবাড়ি ও বড়াইবাড়ি বাচ্চুর ছেলে ফুলচাঁন, বকবান্দা মজিদ কানার ছেলে ফরিদ, বেহুলারচর, মোল্লারচর আব্দুর রাজ্জাক (১), মোল্লারচর, খাটিয়ামারী মজিবর রহমান, চরের গ্রাম, নতুন শৌলমারী ও বোয়ালমারী আব্দুর রাজ্জাক (২), দাঁতভাঙ্গা, ছাট কড়াইবাড়ি, ধর্মপুর রকি, সুর্য্য, কুদরত ও মুকুল, ডিগ্রীরচর পুলিশ/ বিজিবি মিলে ইকবাল হোসেন। পুলিশের (পাইলট) দালাল, দাঁতভাঙ্গা বাজারের আমির হোসেন, চরের গ্রাম নতুন শৌলমারী, চর বোয়ালমারী, গয়টা পাড়া, মোল্লারচর পয়েন্টে করিম শহিদ ও ছক্কু মিয়া। খেয়ারচর গ্রামের মৃত আবুলের ছেলে আব্দুর রশিদ। নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক চোরাকারবারি ব্যবসায়ীরা বলেন, বিজিবি ও এফএসকে প্রতিহাল গরুর জন্য ৭শত টাকা, পুলিশের জন্য ৫ শত টাকা পাইলটের মাধ্যমে দেয়া হয়। এভাবে পয়সা না দিয়ে ব্যবসা করা যায় না।
থানা সুত্রে জানা গেছে, গত দুই মাসে বিজিবি ও অন্যান্য সংস্থার করা ১ টি মামলায় ৪ পিছ ইয়াবাসহ আটক ১ জন, উদ্ধারকৃত মাদক দ্রব্যের মূল্য ১ হাজার ২০০ শত টাকা। পুলিশের পক্ষ থেকে দফায় দফায় ৫ টি মামলায় ৩০ হাজার পিছ ইয়াবা, (ফেন্সিডিল) মদ ১৬২ পিছ, গাঁজা ৩৫ কেজি ২৫০ গ্রাম মাদকসহ আসামী আটক হয়েছে মহিলাসহ ৭ জন, উদ্ধারকৃত মাদক দ্রব্যের মূল্য ৬৬ লাখ ৭৮ হাজার ৯০০ শত টাকা।
কুদরত, বুদ্দি মাষ্টার, বাদশাহ, ছক্কু, ছবেদ আলী, আলীম উদ্দিন, ছদিয়ে, সোনা মিয়া ও মোসলেমসহ একাধিক গরু চোরাকারবারি দলের নেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে খুব বেশি গরু আসে না। বিএসএফ এর খুব কড়া নজরদারী। যে কয়টা গরু আসে বিজিবি, পুলিশসহ বিভিন্ন যায়গায় টোল দিয়েই আমাদের কিছুই থাকে না। যদি বেশী গরু আনা যায় তখন সবাইকে দিয়ে আমাদের কিছু থাকে।
উপজেলার দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও পুলিশিং কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ সামিউল ইসলাম জীবন জানান, সাহেবের আলগা থেকে গয়টা পাড়া পর্যন্ত সীমান্তের যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই খারাপ। চোরাচালানসহ সীমান্তে হত্যার মতো কোন খবর পেলেও তৎক্ষনাত সেখানে যেতে হলে প্রশাসনকে অনেক দুর্ভোগে পড়তে হয় ঘটনা স্থলে পৌছতে। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে স্থানীয় মাদক ও গরু চোরাচালানি ব্যবসায়ীরা চোরাচালানে বেপরোয়া হয়ে পড়েছে। জামালপুর সিওসহ, সীমান্তে চোরাচালান প্রতিরোধে কতবার সচেতনতা মূলক সভা সেমিনার করা হয়েছে। তাতেও চোরাচালান বন্ধ হচ্ছে না। শোনা যায় পুলিশ মাঝে মাঝে মাদক আটক করছেন। এদিকে আনাচে কানাচে মাদকের ছড়াছড়িতে কিশোর, যুবক ও আধা বয়সী মানুষ মাদক সেবনে বেপরোয়া হয়েছে। বাজার ঘাটে সম্মানের সাথে চলাফেরা করাটাও দুষ্কোর হয়ে পড়েছে। আমি চাই প্রশাসন শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করলে মাদকের ছড়াছড়ির ভয়াবহতা কমে আসবে।
এ বিষয়ে দাঁতভাঙ্গা ও শৌলমারী ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, বর্তমানে উপজেলায় মাদকের ছড়াছড়ি ও রমরমা ব্যবসার একটা গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। এতে লক্ষ করা গেছে মাদকে ছয়লাভে যুব সমাজ মাদক সেবনে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মাদকের বিস্তার প্রতিরোধে জনগণ, জনপ্রতিনিধিসহ সরকারি বে-সরকারি সংস্থার সবাইকে মাঠে একযোগে কাজ করে যেতে হবে। পুলিশ ও বিজিবিদেরকে শক্ত ভুমিকা রাখতে হবে। অসুধপায়ী যারা সুযোগে সৎব্যবহার করে, মাদক পাচার ও মাদক ব্যবসার সাথে সহযোগীতায় রয়েছে, তাদেরকে চিহ্নিত করা দরকার।
রৌমারী থানা অফিসার ইনচার্জ রূপ কুমারের সাথে কথা বললে তিনি জানান, সীমান্তে চোরাচালানে ব্যাবসায়ীদের সাথে জড়িত আমার কোন দালাল নেই। আমি মাদক নিয়ন্ত্রনে খুব সর্তকতা অবলম্বনে রয়েছি। সকলের প্রচেষ্টায় মাঝে মাঝে মাদকের বড় বড় চালান আটকের ঘটনাও ঘটিয়েছি।
বিজিবি ৩৫ ব্যাটালিয়ন জামালপুর সহকারী পরিচালক লেঃ কর্ণেল সামছুল হক বলেন, আমাদের বিজিবি তো টহলে জোরদার রয়েছে। তবে আপনারা আমাদেরকে তথ্যদিন, বিষয় গুলি দেখবো।
৩৫ বিজিবি ব্যাটালিয়ন জামালপুর অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল আব্দুল্যাহ আল মাশরুকীর সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলার চেষ্টা করলে মোবাইল ফোনে যায়নি।
এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়
Leave a Reply