শওকত আলী মন্ডল, রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি :
জেলার পূর্বাঞ্চলীয় ১৫ টি নদ-নদী দ্বাড়া বিচ্ছিন্ন, চরাঞ্চলীয়, ভারত সংলগ্ন আসাম ও মেঘালয় পাদদেশ ঘেষা সীমান্তবর্তী উপজেলা রৌমারী ও রাজিবপুর। রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলার আয়তন ৩ শত বর্গ কিঃ মিঃ। ২টি উপজেলায় প্রায় ২৯৮টি গ্রাম জুড়ে লোক সংখ্যা প্রায় ৫ লক্ষ। উপজেলা শহর হতে গ্রাম গঞ্জের যোগাযোগ সড়ক অত্যন্ত নাজুক অবস্থা। দেশ স্বাধীনের অর্ধশত বছর হলেও রৌমারী ও রাজিবপুরে উন্নয়নের ছোয়া থেকে অনেক দুরে। ২ টি উপজেলার ২৯৮ টি গ্রামের মানুষকেই বর্ষা মৌসুমে উপজেলা শহরের সাথে যোগাযোগ সড়ক না থাকায় নৌকা, কলা গাছের ভেলা ও লুঙ্গি গামছা পড়ে হাট বাজারে কিংবা উপজেলা শহরে আসতে হয়। রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একটি মুক্তাঞ্চল।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতার বিরোধী শক্তি পশ্চিমা পাকিস্তানী স্বৈর শাসক পাকহানাদার বাহিনী অন্যায় ভাবে বাংলাদেশ দখলের পায়তারা করছিল। সেদিন সারা বাংলাদেশ তাদের দখলে নিলেও কুড়িগ্রামের ভারতীয় আসাম ও মেঘালয় সীমান্তবর্তী উপজেলা রৌমারী ও রাজিবপুর ছিল পাকহানাদার দখল মুক্ত। এই রৌমারী থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ৬৫ হাজার মুক্তি বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে দেশ স্বাধীনতায় সহযোগিতা করেছেন। আজও সেই রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলা অবহেলিত। রৌমারীর সাহেবের আলগা হতে রাজিবপুরের বালিয়ামারী ভায়া পাথরেরচর পর্যন্ত জিঞ্জিরাম নদী ঘেষে ধনুকের মতো আঁকা বাঁকা হয়ে গেছে ৪০ কিঃ মিঃ সীমান্ত পথ। যেখানে রয়েছে ১০ টি বিজিবি ক্যাম্প।
যেমন সাহেবের আলগা, দাঁতভাঙ্গা, গয়টা পাড়া, মোল্লারচর, রৌমারী সদর, ইজলামারী, বড়াই বাড়ী, বালিয়ামারী, বাঘারচর ও পাথরেরচর। সীমান্তে যাতায়াতে কোন সড়ক নেই। যোগাযোগ সড়ক না থাকায় বর্ষা মৌসুমে হাত পা গুটিয়ে ক্যাম্পে বসে থাকতে হয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) অতন্ত্র প্রহরীদের। যার ফলে চোরাচালানিরা সুযোগে, চোরাচালানের জোরদার বেড়ে যায় এবং কোন ধরনের দুর্ঘনায় সীমান্ত রক্ষিবাহিনী বিজিবি সঠিক সময় পৌছতে পারে না সীমান্তে। এমনকি শুকনা মৌসুমেও। তাই দেশের সার্বভৌমত্ব ও সীমান্তবাসীকে রক্ষা ও চোরাচালান বন্ধে সাহেবের আলগা হতে বালিয়ামারী ভায়া পাথরেরচর বিজিবি পর্যন্ত ৪০ কিঃ মিঃ সীমান্তের জিরো পয়েন্ট থেকে কমপক্ষে ১৫০ গজ বাহির দিয়ে একটি বেড়িবাদ নির্মানসহ প্রতিটি বিজিবি ক্যাম্পের সাথে সংযোগ সড়ক নির্মান করা অতি জরুরী। সীমান্ত সড়ক না থাকায় বিজিবি সীমান্ত টহল জোরদার করতে পারে না।
ফলে সীমান্ত ঘেষা গ্রামের মানুষ সময় অসময়ে সীমান্তের পাশে কেহ ফসলী জমিতে, কিংবা গরু ছাগল ফেরাতে সীমান্তের পাশে এলে ভারতীয় বিএসএফ খেয়াল খুশি মতো গুলি ছোড়ে। এমনি ভাবে গত ২০১০ দশকের পর থেকে তাদের গুলিতে প্রানদিতে হয়েছে ১৫ বছর বয়স থেকে ৫৫ বছর বয়সের প্রায় ৫০ জন বাংলাদেশীকে। বিএসএফ এর গুলিতে নিহত পরিবারের মানবেতর জীবন ও আর্তনাথে লোম শিহরে উঠে। গুলিতে নিহতের মা ও স্ত্রী ভাতের প্লেট নিয়ে আজোও পথ চেয়ে বসে থাকে কখন আসবে স্বামী বা সন্তান।
তাই স্বাধীনতার মুক্তাঞ্চল রৌমারী ও রাজিবপুরের প্রায় ৫ লক্ষ মানুষের প্রানের দাবী সরকারের উচ্চ পর্যায়ে বারবার গুলির বাধা থাকলেও গুলি করা বাকি রাখে না। মনগড়া ভাবে ভারতীয় বিএসএফ এর গুলি বর্ষণের হাত থেকে রক্ষায় দ্রুত সীমান্তের যোগাযোগ সড়ক নির্মানসহ পাকা করণের কাজ করা হউক। সীমান্ত যোগাযোগ রাস্তার প্রয়োজনে রৌমারী সদর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক, শৌলমারী ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, যাদুরচর ইউপি চেয়ারম্যান সরবেশ আলী, দাঁতভাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করিমসহ এলাকাবাসী বলেন, রৌমারী সাহেবের আলগা থেকে পাথরেরচর পর্যন্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন সীমান্ত। সীমান্ত জুড়ে রয়েছে জিঞ্জিরাম নদী ঘেষে ৪০ কিঃ মিঃ পথ। যেখানে স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়েও নির্মান হয়নি সীমান্ত সড়ক। যার ফলে ৪০ কিঃ মিঃ সীমান্ত জুড়ে বিজিবি এর টহলদল সঠিক সময়ে ডিউটি পালনে ব্যর্থ হয়।
এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়
Leave a Reply