মোঃ আবদুল আউয়াল সরকার, কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধি :
ছোট ছোট পাহাড়। তপ্ত রোদ। তার মধ্যে নিবিষ্ট মনে দু হাত দিয়ে সবুজ কুঁড়ি ছিঁড়ে পিঠের ঝুড়িতে রাখা হচ্ছে। সবুজ চা পাতা সংগ্রহের এমন দৃশ্য এখন কুমিল্লার লালমাই পাহাড়ে। গত কয়েক বছরের চেষ্টায় লালমাই পাহাড়ে গড়ে উঠেছে চা বাগান। বাণিজ্যিকভাবে গড়ে ওঠা চা বাগান নিয়ে আশাবাদী উদ্যোক্তারা।
বাণিজ্যিকভাবে চা চাষ করার উদ্যোক্তা স্থানীয় তারিকুল ইসলাম মজুমদার। শখের বসেই লালমাই পাহাড়ের বড় ধর্মপুর এলাকায় প্রায় এক একর জমিতে ছয় হাজার চা গাছ রোপণ করেন তিনি। তার ইচ্ছা এখানে চা পাতা প্রক্রিয়াকরণের কারখানাও গড়বেন।
তারিকুল ইসলাম মজুমদার বলেন, ‘গত ২০২১ সালের মার্চ মাসে প্রথম তিন হাজার এবং জুন-জুলাই মাসে আরও তিন হাজার চা গাছ রোপণ করি। পরে ৬ একর জমিতে অন্তত দশ হাজার চা গাছ রোপণ করি।
‘বিটি-২ জাতের চা গাছ রোপণ করেছি এখানে। বর্তমানে এ জাতের চায়ের রং ও স্বাদ খুবই চমৎকার। বাজারে বিটি-২ জাতের চায়েরও চাহিদা ব্যাপক।
চা বাগানের উদ্যোগের বিষয়ে তারিকুল বলেন, ‘শ্রীমঙ্গলে জিডি সান নামে আমার এক ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বন্ধু আছে। সে খাসিয়াদের রাজা। চা বাগান করতে সেই মূলত আমাকে সহযোগিতা করেছে। একদিন জিডি সান দলবল নিয়ে কুমিল্লায় আসে। সে জানিয়েছিল, লালমাই পাহাড়ের মাটি চা চাষের জন্য খুবই উপযোগী। তারপর আমি চা বাগান করতে আগ্রহী হই। এখন বাগানটি দেখতে প্রায়ই বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা আসছেন।
বড় ধর্মপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, এখানে মাথা তুলে আছে ছোটো বড় পাহাড়। লাল মাটির দুইটি পাহাড়ে প্রথমবারের মতো চা চাষ করা হয়েছে। পাহাড়ের ওপরে ও ঢালুতে চা গাছের চারা লাগানো হয়েছে। কয়েকজন শ্রমিক চা পাতা তুলছেন। তাদের কাঁধে কাপড়ের তৈরি থলে। চা গাছ থেকে দুটি পাতা ও একটি কুঁড়ি একসঙ্গে সংগ্রহ করছেন।
চা শ্রমিক রাজু সিং জানান, তার বাড়ি শ্রীমঙ্গলে। এখানে থেকে চা গাছের পরিচর্যা ও পাতা তোলেন। মার্চ মাস থেকে চা পাতা তোলা হচ্ছে। ইতোমধ্যে হাজার কেজি পাতা তুলেছেন। পাশের পাহাড়ে আরও চা গাছ লাগানো হচ্ছে। লালমাই পাহাড়ে সিলেটের মতো চা বাগান ছড়িয়ে পড়বে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সদর দক্ষিণ উপজেলার কৃষি অফিসার হাবিবুল বাশার চৌধুরী বলেন, ‘লালমাই পাহাড়ে বড় ধর্মপুরে প্রথমবারের মতো চা চাষ হয়েছে। এখানে চা উৎপাদনে মাটির যে ক্ষার থাকার কথা তা রয়েছে। আমরা বিভিন্ন সময়ে উদ্যোক্তাকে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লার উপপরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘জেলায় এটি প্রথম উদ্যোগ। আমরা লালমাই পাহাড়ের চা চাষের এলাকাটি কয়েকবার পরিদর্শন করেছি। এখানে বৃষ্টির পরিমাণ কম। বৃষ্টির পরিমাণ বাড়লে তিনি আরও ভালো করতে পারবেন। তবে তিনি কৃত্রিম সেচের ব্যবস্থা করেছেন। এখানে ভালো গ্রিন টি হতে পারে বলে আশা করছি।
এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়
Leave a Reply