এস.এম অভি, ফরিদপুর থেকেঃ
লিবিয়ায় এক মানবপাচারকারীর পরিবারের সদস্যদের গুলিতে নিহত ২৬ বাংলাদেশীর মধ্যে ফরিদপুর জেলার সালথা উপজেলার একজন নিহত হয়েছেন। এছাড়া জেলার আরো একজন গুলিবিদ্ধ হয়েছে বলে জানা গেছে।
ফরিদপুরের নিহত ব্যক্তি জেলার সালথা উপজেলার বল্লভদি ইউনিয়নের আলমপুর গ্রামের কবির শেখের ছেলে মোঃ কামরুল ইসলাম। নিহত কামরুলের স্ত্রী ও দুই বছরের পুত্র সন্তান রয়েছে। কামরুলকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে পুরো পরিবার। টেলিভিশন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার মৃত্যুর খবর জানার পর থেকে পরিবারে চলছে এখন শোকের মাতম।
নিহত কামরুলের পিতা কবির শেখ কান্না জরিত কন্ঠে বলেন, অভাব অনটনের সংসার। আশা ছিলো ছেলেকে বিদেশে পাঠায়ে যদি একটু সুখের মুখ দেখা যায়। সেই আশা নিয়ে দালালের কথা মতো সমিতি থেকে লোন ও জমি বিক্রির সাড়ে চার লাখ টাকা জোগার করে গত ডিসেম্বর (পাচঁ মাস) মাসে ছেলেকে পাঠিয়েছিলেন বিদেশে। ছেলের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের পাশাপাশি পরিবারের স্বচ্ছ্বলতার কথা ভেবেই তাকে বিদেশ পাঠানোর তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন কবির শেখ। কিন্তু স্বপ্ন পূরণতো দূরের কথা উল্টো লিবিয়া থেকে দালালরা ফোন করে ১০ লাখ টাকা দাবি করে আসছিলো কিছুদিন যাবত। তিনি বলেন পাশের গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর থানার গোয়ালা গ্রামের দালাল আব্দুর রব এর মাধ্যমে ভারত ও দুবাই হয়ে লিবিয়ায় পৌঁছান কামরুল।
নিহতের বড় ভাই ফারুক শেখ জানান, দালাল চক্র লিবিয়ার একটি শহরে তাকে আটকে রেখে নির্যাতন শুরু করে। তাদের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে পাচারকারী চক্রটি। ভাইয়ের জীবনের কথা ভেবে টাকা দিতে রাজিও হন তারা। কিন্তু টাকা পাঠানোর আগেই খবর এলো দালাল চক্র লিবিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় মিজদা শহরে কামরুলসহ ২৬ বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা করেছে।
এ সময় কান্নাজড়িত কন্ঠে তিনি বলেন, আমার ছোট ভাইয়ের লাশটা যেনো পাই, সরকার লাশ দেশে আনার ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছেন। সরকারের কাছে আমাদের আকুতি, আমরা যেন ছোট ভাইয়ের লাশটা পাই।
সালথা উপজেলার নির্বাহী অফিসার হাসিব সরকার বলেন, আমরা উপজেলা প্রশাসনের তরফ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করবো ওই পরিবারকে। জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে কামরুলের মরদেহ আইনী প্রক্রিয়া শেষে দ্রুত দেশে আনার জন্য ব্যবস্থা গ্রহন করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। এছাড়া যে দালাল চক্রের দ্বারা এমন ঘটনা ঘটেছে তাদের কে আইনের আওতায় আনা হবে বলেও তিনি জানান।
এদিকে ফরিদপুর জেলায় আহত অপর ব্যক্তি ভাঙ্গা উপজেলার দুলকান্দি গ্রামের মো. সাজিদ হোসেন। তিনি পেটে গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
প্রসঙ্গত, বৃস্পতিবার (২৮ মে) লিবিয়ায় ৩০ জন অভিবাসীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৬ জনই বাংলাদেশি বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স। অন্য চারজন আফ্রিকান অভিবাসী। বৃহস্পতিবার লিবিয়ার সংবাদমাধ্যমে এ খবর জানিয়ে বলা হয়, সাহারা মরুভূমি অঞ্চলের মিজদা শহরের এ ঘটনায় আরও ১১ জন আহত হয়েছেন।
এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়
Leave a Reply