বুধবার, ২৯ মার্চ ২০২৩, ০৮:০৪ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :
টাঙ্গাইলে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মাদ্রাসা ছাত্রের মৃত্যু শেরপুরে মুরগির খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় লোকসান খামারিদের নূরে আলম সিদ্দিকীর মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক মেসির হ্যাটট্রিকে গোলের সেঞ্চুরি, আর্জেন্টিনার বিশাল জয় নূরে আলম সিদ্দিকী আর নেই ওয়াজ মাহফিলে উস্কানিমূলক বক্তব্য না দেওয়ার শর্তে রফিকুলের জামিন দ্রব্যমূল্য বেড়েছে, তারপরও আমরা ভালো আছি: কাদের মামলা থাকায় প্রথম আলোর সাংবাদিককে আটক: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টাঙ্গাইল-৪ আসন ভিআইপি প্রার্থী লতিফ সিদ্দিকী দুই দলের বিষফোঁড়া পবিত্র রমজানের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মানবাধিকার কমিশন শেরপুর জেলা শাখার সভাপতি মেরাজ উদ্দিন

শাহজাদপুরে গোহালা নদীর বালুমহল ইজারা বন্ধের দাবীতে স্মারকলিপি প্রদান

Reporter Name
  • Update Time : সোমবার, ১২ মার্চ, ২০১৮
  • ৩৪ Time View

মাসুদ মোশাররফ, শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি ঃ সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার পোতাজিয়া ইউনিয়নের রামকান্তপুর মৌজার গোহালা নদীর ভয়াবহ ভাঙ্গণ রোধে ক্ষতিগ্রস্তরা সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেছে। গত রোববার সকালে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেহেলী লায়লা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) হাসিব সরকারের মাধ্যমে জেলা প্রশাসকের কাছে এ স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক,গো-খামারি ও মৎস্যজীবিরা জানান, গত ১০/১২ বছর ধরে চরাচিথুলিয়া গ্রামের কতিপয় অসাধু বালু ব্যবসায়ী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে উৎকোচের বিনিময়ে ম্যানেজ করে ইজারা নিয়ে সরকারি নিয়ম সম্পূর্ণ অমান্য করে ড্রেজার দিয়ে অবৈধ ভাবে অতিমাত্রায় বালু উত্তোলনের ফলে গোহালা নদীতে ব্যাপক ভাঙ্গণ শুরু হয়েছে। এ ভাঙ্গণের তান্ডবে ইতিমধ্যেই এ এলাকার শত শত বিঘা ফসলি জমি ও গো-চারণ ভূমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়া রবীন্দ্র বিশ^বিদ্যালয় নির্মাণের নির্ধারিত স্থান ও ২৫টি গরুর বাথান হুমকির মুখে পড়েছে । নদীরপাড় ভেঙ্গে যাওয়ায় বাথান এলাকার শত শত গরু নদীতে নেমে পানি খেতে পারছেনা। পানি খেতে গিয়ে অনেক গরুর পা ও কোমর ভেঙ্গে যাচ্ছে। অনেক গরু পানিতে পড়ে মারাও যাচ্ছে। ভাঙ্গণের তান্ডবে নদীর গভীরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় শতাধিক মৎস্যজীবি এ নদী থেকে মাছ ধরতে না পারায় তারা পরিবার পরিজন নিয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
ফলে এ সব ক্ষতিগ্রস্তরা গোহালা নদী থেকে বালু উত্তোলন সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধের জন্য আগামী ১৪ মার্চের বালু মহল ইজারার টেন্ডার স্থগিতের আবেদন জানিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে এ স্মারকলিপি প্রদান করেছে। এ ব্যাপারে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও গো-বাথান মালিক আলহাজ¦ আব্দুস সালাম ব্যাপারী, আলহাজ¦ কালাম চৌধুরী,নূরুল ইসলাম,শামছুল ইসলাম,হাজী আজাদ,নওশাদ আলী,উজ্জল প্রাং,জমারত আলী ও মাহমুদ আলী জানান, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ১০ ফুটের অধিক গভীর করে, নদীর পাড় ও ফসলী জমি কিংবা বাড়িঘর বা কোন স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয় এমন ভাবে বালু উত্তোলন করা যাবে না। অথচ ওই প্রভাবশালী ইজারাদারগণ সরকারের এ নিয়ম অমান্য করে কমপক্ষে ১২০ ফুট গভির করে বালু উত্তোলন করা হয়েছে। ফলে ওই নদীর দু‘পাড়ে ভয়াবহ ভাঙ্গণের তান্ডব শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই তাদের ফসলী জমি,গো-চারণ ভূমি,বাথান ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। তারা আরো জানান,রামকান্তপুর এলাকা দেশের সর্ববৃহৎ গো-চারণ ভূমি। এখানকার উৎপাদিত গরুর দুধ মিল্কভিটা সহ প্রায় ২০টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বাজারজাতের মাধ্যমে দেশের ৭০ ভাগ শিশুর পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে। অথচ একটি স্বার্থান্বেষী প্রভাবশালী মহল দেশের এই গুরুত্বপূর্ণ বাথান এলাকা ধ্বংসের হীন চক্রান্তে লিপ্ত হয়ে গোহালা নদী থেকে অতিমাত্রায় বালু উত্তোলনের ফলে এই ভাঙ্গণ তীব্র আকার ধারণ করেছে। ফলে এখানকার গোহালা নদীর পাড় ২৫/৩০ ফুট খাড়া হয়ে ভেঙ্গে গেছে। এতে বাথানের গরু পানি খেতে গিয়ে নিচে পড়ে মারা যায় অথবা পা-কোমর ভেঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অপর দিকে আবাদী জমি এ ভাঙ্গণের কবলে পড়ে বিলীন হয়ে যাওয়ায় কৃষকেরা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ ভাঙ্গণ দ্রুত রোধ করা না গেলে শত শত বিঘা ফসলী জমি,রবীন্দ্র বিশ^বিদ্যালয় স্থাপনের নির্ধারিত স্থান ও ২৫টি বাথান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। এই ক্ষতির হাত থেকে কৃষকদের রক্ষার জন্যই তারা বালুমহলের ইজারা বন্ধের দাবীতে স্মারকলিপি প্রদান করেছে। অপর দিকে রাউতারা বড়পাড়া মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুল আজিম শেখ ও সাবেক সভাপতি আমীর আলী শেখ জানান,নিয়ম অমান্য করে ১০ ফুটের স্থলে ১২০ ফুট গভীর করে গোহালা নদী থেকে বালু উত্তোলন করায় তাদের সমিতি ভুক্ত শতাধিক মৎস্যজীবি মাছ আহরণ করতে না পাড়ায় অর্ধাহারে অনাহারে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। তারা আরো জানান,তাদের মাছ ধরার জালের ব্যাস সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ৭/৮ ফুটের বেশি নয়। মাত্রাতিরিক্ত বালু উত্তোলনের ফলে এ নদীর গভীরতা ১০/১২ গুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা এ নদী থেকে মাছ আহরণ করতে না পারায় তাদের এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তারা বলেন, তারা তাদের সমিতির নামে বৈধ উপায়ে সারা বছর মৎস্য আহরণের জন্য ইজারা নিয়েছেন। তার পরেও ওই একই যায়গায় বালু উত্তোলনের জন্য অপর পক্ষকে ইজারা দেয়া হয়েছে। তারা দাবী করেন,একই স্থানের দুইবার ইজারা দেয়ার কোন নিয়ম না থাকলেও সিরাগগঞ্জের ডিসি অফিসের অসাধু কর্মকর্তারা উৎকোচের বিনিময়ে ম্যানেজ হয়ে এ নদীর একই জায়গার দু‘টি ইজারা প্রদান করায় এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তারা আরো বলেন, এ বছর শত নিষেধ করা শত্বেও ওই অসাধু কর্মকর্তারা নতুন করে বালুমহলের টেন্ডার আহব্বান করেছে। এ বছর এই ইজারা প্রদান করা হলে এখানে রক্তের বন্যা বয়ে যাবে। এ পরিস্থিতির জন্য তারাই দায়ী থাকবে। তাই এ ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে এলাকাবাসির যান-মাল রক্ষার্থে জেলা প্রশাসকের কাছে এ স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। এ ব্যাপারে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেহলী লায়লা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) হাসিব সরকার বলেন,তাদের এ আবেদনের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দ্রুত সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক মহোদয়কে অবহিত করা হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়