বুধবার, ০৭ জুন ২০২৩, ১১:৫০ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম :

শাহজাদপুরে ফুলে ফুলে সিক্ত হলেন গোল্ডেন বুট জয়ী আঁখি

Reporter Name
  • Update Time : মঙ্গলবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৭
  • ৫৬ Time View

শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি ঃ
সাফ অনুর্ধ-১৫ এর চ্যাম্পিয়নশিপ ফুটবল টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়ার গোল্ডেন বুট জয়ী আঁখি আকতার গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার পৌর সদরের পাড়কোলা গ্রামের বাড়িতে এসে পৌছান। এ সময় তিনি গ্রামবাসি ও শুভাঙ্কাখিদের দেয়া ফুলে ফুলে সিক্ত হয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। এরপর সে হতদরিদ্র তাঁত শ্রমিক পিতা আকতার হোসেন ও মা নাছিমা বেগমের জীর্ণ কুটিরে পৌছালে তারা তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে পরম ¯েœহের সাথে বরণ করে নেন। এর আগে গ্রামবাসি,সহপাঠি,পাড়কোলা সরকারি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা তাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। পাড়কোলা বাসস্ট্যান্ড থেকে পায়ে হেটে বাড়ি ফেরা কালে তিনি গ্রামবাসির সাথে কুশল বিনিময় ও সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। তার এ অসামান্য কৃতিত্বে গ্রামবাসি উচ্ছাস প্রকাশ করেন। তারা তাকে কাছে পেয়ে আবেগাপ্লুতও হয়ে পড়েন। অবশেষে প্রতিক্ষার পালা শেষ করে গ্রামের মেঠ পথ ধরে পায়ে হেটে তার বাবা-মায়ের জীর্ণ কুটিরে গিয়ে হাজির হন। এ সময় তাকে এক নজর দেখার জন্য সেখানে উৎসুক মানুষের ভীড় জমে। এ সময় তিনি হাসি মুখে সবার সাথে কুশল বিনিময় করেন। আঁখি জানায়,দীর্ঘ জার্নীর পরেও সে মোটেও ক্লান্ত নয়। এক দিন বাড়িতে বিশ্রাম শেষে ফুটবল খেলায় আগ্রহী মেয়েদের অনুশীলন করাবেন। তার এ অনুশীলন আগামী ১০ জানুয়ারী পর্যন্ত চলবে। তিনি আশা করেন তার এ অনুশীলনের মধ্য দিয়ে আরো নতুন সম্ভাবনাময় ফুটবল খেলোয়ার তৈরী হবে। তিনি তার ছুটির ফাঁকে ফাঁকে এলাকায় এ কাজ চালিয়ে যাবেন বলে জানান। আঁখির মা নাছিমা বেগম ও ভাই নাজমূল ইসলাম জানান,আঁখি আগামী ১০ জানুয়ারী পর্যন্ত শাহজাদপুর উপজেলার পৌর সদরের পাড়কোলা গ্রামের ১৪ টিনের এ জীর্ণ কুটিরেই থাকবেন। আঁখির বাবা আকতার হোসেন জানায়,তাদের সহায় সম্বল বলতে এই দেড় শতক বাড়ি ও ১৪ টিনের এ জীর্ণ ঘরটি ছাড়া আর কিছুই নেই। অন্যের ফ্যাক্টরিতে তাঁত শ্রমিকের কাজ করে যে আয় হয় তা দিয়ে চলে তাদের ৪ জনের সংসার। তার মা নাছিমা বেগমও চরকায় দিনরাত সূতা ভরার কাজ করে। এতে তাদের দু‘বেলা খাবার কোন মতে জোগার করতে পারলেও ছেলে-মেয়ের পড়ার খরচ জোগার করা কোন ভাবেই সম্ভব হয়না। তাই তারা মেয়ের উজ্জল ভবিষ্যৎ নিয়ে বড় চিন্তিত। তিনি আরো জানান, তৃতীয় শ্রেণীতে পড়াকালে স্কুল শিক্ষক মনছুর রহমানের অনুপ্রেরণায় শাহজাদপুরে বঙ্গমাতা স্কুল টিমে নাম লেখায়। সেই থেকে তার ফুটবল খেলা শুরু। এরপর সে ২০১২ ও ২০১৩ সালে ফুটবল খেলায় রাজশাহী বিভাগীয় চ্যাম্পিয়ন হয়। এরপর ২০১৬ সালে আঁখি বিকেএসপিতে চান্স পেয়ে অনুর্ধ-১৪ দলের হয়ে ভারত,নেপাল,থাইল্যান্ড,ভূটান,চীন,যাপান,সিঙ্গাপুর,তাজাকিস্তান ও দক্ষিণ কোরিয়া সফর করেন। প্রতিটি খেলায় সে চ্যাম্পিয়ন শিরোপা অর্জন করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকেও দুই বার পুরষ্কার গ্রহণ করেন। থাইল্যান্ডের অনুর্ধ-১৪ ফুটবল খেলায় সে স্বর্ণপদক লাভ করেন। তার এ সাফল্যে এলাকাবাসি সহ দেশবাসি আজ গর্বিত। তিনি বলেন,আঁখি আমার ভাঙ্গা ঘরে চাঁদের আলো। এ উজ্জল সম্ভাবনাময় ফুটবল তারকাকে ধরে রাখতে তিনি সবার সহযোগীতা কামনা করেন। অস্বচ্ছল পরিবারের সন্তান আঁখির একমাত্র বড় ভাই নাজমূল ইসলাম উল্লাপাড়া সরকারি আকবর আলী ডিগ্রি কলেজের দর্শন বিভাগের ১ম বর্ষের ছাত্র। অর্থাভাবে তার লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম। তারপরেও ছোট বোন আঁখির এ সাফল্যে সে উচ্ছসিত ও আনন্দিত। সেও তার বোনের এ সাফল্য ধরে রাখতে সবার সহযোগীতা কামনা করেন। আঁখির মা নাছিমা বেগম বলেন, মেয়েকে কোন দিন দু‘বেলা পেট ভরে ভাল করে ভাতও খেতে দিতে পারিনি। তাদের ভাঙ্গা ঘরে বৃষ্টি এলে পানি পরে। শীতে ভাঙ্গা ঘরে হু হু করে ঠান্ড বাতাস ঢোকে। ভাল একটি লেপ-কম্বলও তাদের নেই। তাই মেয়েকে একটু ভাল বিছানায় শুতে দেয়ার মত সমর্থও তাদের নেই। কাথা-কাপড়ের অভাবে প্রায়ই সে দাদী,চাচির ঘরে রাতে ঘুমায়। সে ফুটবল ছাড়াও এ্যাথলেটিক্সে খুব ভাল। লং জাম্প ও হাই জাম্পেও একাধিকবার জেলা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। সে লেখাপড়ায়ও খুব ভাল। গত জেএসসি পরীক্ষায় ৪.৬৩ পেয়ে নবম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়েছে। আঁখির বাড়ি ফেরায় এলাকায় আনন্দের বন্যা বইছে। আঁখিকে আগমী ৩১ ডিসেম্বর শাহজাদপুর সরকারি কলেজ মাঠে বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার সংগঠন পূরবী থিয়েটার,শিশু সংগঠন ভোরহলো ও যুগান্তর স্বজন সমাবেশ শাহজাদপুর উপজেলা শাখার পক্ষ থেকে এক নাগরিক সংবধনা দেবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category

এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়