মোঃ শামছুল হক, জেলা প্রতিনিধি শেরপুর :
শেরপুরের শ্রীবরদীতে গত কয়েকদিন থেকেই ঘন কুয়াশা আর তীব্র শীতের বৈরী হাওয়ার কারণে কৃষক কৃষাণী ও শ্রমজীবী মানুষের জীবন জীবিকা চলানো কঠিন হয়ে পড়েছে। শুধু তাই নয় পশু পাখি, আবাদি ফসল গুলো আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। তীব্র ঠান্ডার কারণে হাসপাতাল ক্লিনিক গুলোতে ঠান্ডা, কাশি,লিউমুনিয়ার রোগী বেশি দেখা যাচ্ছে।
বিশেষ করে শ্রীবরদী উপজেলা হচ্ছে সীমান্তবর্তী উপজেলা।এ উপজেলায় শীতকালীন সময়ে ঘন কুয়াশা আর প্রচন্ড ঠান্ডা থাকায় এ অঞ্চলের জনসাধারণের চলাফেরা করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষের জীবনে কঠিন বেপার হয়ে যায়।দেখা যায় অনেক শ্রমিক শহর অঞ্চলে বিভিন্ন পেশায় কাজ করে। কিন্তু ঘন কুয়াশা আর তীব্র ঠান্ডার কারণে তারা কাজে যেতে পারেনা।
কিছু কিছু শ্রমিকদের দেখা যায় তারা শীতের কাপুনি নিয়েই শহর অঞ্চলে কাজে বের হচ্ছে জীবন জীবিকা নির্বাহ করার জন্য।এদিকে শীতের কবলে মানুষের জীবন অতিষ্ঠ হয়েছে।তার মধ্যে পশু পাখির জীবনেও অতিষ্ঠ নেমে এসেছে। সকাল হলেই পশু পাখির ঝিকিমিকি ডাক শুনা যেতো। শীতের কবলে পড়ে পশু পাখির ও ডাক শুনা যাচ্ছেনা গত কয়েকদিন থেকে।
বিশেষ করে কৃষকদের রোপণকৃত বোরো ধানের চারা,সরিষা, আলু,বেগুন গাছ, মরিচের চারা গুলো কোল্ড ইনজুরি আক্রান্ত হয়ে বীজতলা গুলো হলুদ রং ধারণ করে আস্তে আস্তে মারা যাচ্ছে। এর ফলে সাধারণ কৃষকেরা বিপাকে পড়েছে। এমন বৈরী আবহাওয়া চলমান থাকলে কোল্ড ইনজুরির কারণে বিশেষ করে কৃষকদের রোপিত ধানের চারা গুলো পুরোপুরি নষ্ট হওয়ার আশংকা রয়েছে।
খড়িয়া কাজিরচরের কৃষক মোঃ কালাচান মিয়া বলেন,তীব্র শীত আর ঘন কুয়াশার কারণে আমাদের বোরো ধানের চারা গুলো হলুদ রং ধারণ করে আস্তে আস্তে মারা যাচ্ছে।আমি কয়েক একর জমিতে আলু, সরিষা চাষ করেছি।সরিষা আলু খুবি সুন্দর হয়েছে। কিন্তু গত কয়েকদিন থেকে তীব্র শীত আর ঘন কুয়াশার কারণে সরিষা,আলু নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কিট নাশক দিয়েও তা প্রতিহত করা যাচ্ছেনা।এমন ধরনের শীত আর ঘন কুয়াশা থাকলে বোরো ধানের চারা গুলো রোপণ করতে পারবোনা।উপজেলার গোশাইপুর ইউনিয়নের কৃষক মোঃ আবদুল ছাত্তার বলেন,বোরো ধানের চারা,আলু,সরিষা,মরিচ রোপন করেছি আমি।
এসব ফসলে অনেক টাকা খরচ করেছি।ফসলও সুন্দর হয়েছে।কিন্তু গত কয়েকদিন থেকে ঘন কুয়াশা আর ঠান্ডার কারণে হলুদ রং হয়ে গেছে।কিছু কিছু মরেও যাচ্ছে।তবে বোরো ধানের চারা গুলো বেশি মরে যাচ্ছে।মরে গেলেও সরিষা আলু কিছু পামু।কিন্তু বোরো ধানের চারা গুলো পুরোপুরি মরে গেলে আমাদের পুনরায় ধানের বীজতলা রোপণ করা সম্ভব হবেনা।এখন যে হারে শীতের তীব্রতা বাড়ছে আমার মনে হয়।বোরো ধানের চারা কেন,আমাদের ঘর থেকে বের হওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।
তাতিহাটি ইউনিয়নের অবসর প্রাপ্ত সেনা সদস্য কৃষক মোঃ রেজাউল করিম বলেন। শীতের কবলে শুধু রোপণ কৃত বীজতলায় নয়।তীব্র শীত আর ঘন কুয়াশার কারণে মানুষ ঠিক মতো কাজ কর্মও করতে পারছেনা।গত কয়েকদিন থেকে হাট বাজারেও তেমন লোকজন দেখা যায় না। বিকাল হলেই সাধারণ মানুষ বাজারে চায়ের দোকানে আড্ডা দিত।এখন দেখা যায় সন্ধা ঘুনিয়ে আসা মাত্রই মানুষ বাজার ত্যাগ করে বাড়ি চলে যায় শুধু প্রচন্ড ঠান্ডার কারণে।
এমন তীব্র ঠান্ডা অব্যাহত থাকলে সাধারণ মানুষের জীবন জীবিকা চলানো কষ্টকর হয়ে যাবে।
শ্রীবরদী উপজেলার উপসহকারী উদ্ভিদ কৃষি কর্মকর্তা মোঃ জাকির হোসেন জানান, এসময় এ অঞ্চলে ঘন কুয়াশা আর প্রচন্ড ঠান্ডার কারণে রোপনকৃত বীজতলা গুলো হলুদ রং ধারণ করে আস্তে আস্তে মারা যায়। আবহাওয়া এমন থাকলে মানুষের জীবন যেমন কঠিন হয়ে পড়ে। তেমনি ফসলের ক্ষত্রেও তাই।তবে আমাদের কৃষি অফিসের নির্দেশক্রমে কৃষকদের বিভিন্ন ধরনের ফসলের জন্য বিভিন্ন প্রকার কিটনাশক ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছি।আসা করছি কুয়াশা প্রতিরোধ করে ফসল পুনরায় ঠিক হয়ে যাবে।
এদিকে পল্লী চিকিৎসক ডাঃ শাকিল আহমেদ বলেন, গত কয়েকদিন থেকে প্রচন্ড ঠান্ডার কারণে আমাদের ফার্মিসিতে ঠান্ডা,কাশি, লিউমুনিয়ার রোগী বেশি আসছে। এর মধ্যে শিশু, বয়স্ক রোগী গুলো বেশি।
এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়
Leave a Reply