সাওগারে আলম ছগির :
আমাদের পরিবার, সমাজ কিংবা দেশ যেটাই বলেন না কেন, মাদকের কড়াল গ্রাসে নিমজ্জিত হয়ে ভুগছে আমাদের ভবিষ্যৎ। আমরা যতই মাদকের বিরুদ্ধে কথা বলি না কেন, মাদকের নেশা আমাদের সমাজকে জোঁকের মতো আকড়ে ধরে রেখেছে তেমনী কিছু দু’মুখো সাপের মত নেতা রয়েছে যারা ষ্টেজে দাড়িয়ে মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর বক্তব্য দিলেও বাস্তবে করছে তার উল্টো।
আবার অনেক সময় মাদক বিক্রেতারা গ্রেফতার হলেও এদের দমনে আইন থাকলেও আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে বের হয়ে এসে পুনরায় তারা আগের চেয়ে বেশি দাপটে চালিয়ে যাচ্ছে মাদকের ব্যবসা। পবিত্র ঈদুল ফিতরের আর বেশী বাকী নেই। পরিবারের সকলের আনন্দকে ভালভাবে উপভোগ করাতে অভিভাবকরা এখন মার্কেট মুখী। এর মাঝেও পুরোপুরি সোচ্চার রয়েছে যুবসমাজকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিতে সমাজের প্রভাবশালী মাদক ব্যবসায়ীরা।
রোজার পুর্বে দেশের মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা যেভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি মজুদ করে দেশের মধ্য ও নিন্মমধ্যবিত্ত পরিবারকে খাদ্য সংকটের মুখোমুখি করেছেন ঠিক তদ্রুপ সমাজের কিট হিসেবে পরিচিত মাদক ব্যবসায়ীরা ঈদকে সামনে রেখে শুরু করেছে মাদকের মজুদ। যদিও ইতিমধ্যে র্যাবের চৌকস সদস্যরা কয়েকটি স্থানে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমানে মাদকসহ বিক্রেতাদের গ্রেফতার করলেও তা পারছেনা থানা পুলিশ। যা অনেকটাই দুঃশ্চিন্তায় ফেলেছে অভিভাবক সমাজকে।
বিভিন্ন সময় অভিযানে মাদক সম্রাট -সম্রাজ্ঞীদের ধরলেও সব সময়ই ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকছে মাদকের গডফাদাররা। আর তাইতো মাদকের সম্রাট/সম্রাজ্ঞীদের ধরা হচ্ছে আবার ছেড়েও দেওয়া হচ্ছে। কেন ধরছি কেন ছাড়ছি তা জানি না। তাই ক্রমেই মাদক সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে যাচ্ছে আমাদের সমাজ ও প্রশাসনসহ সমগ্র জাতি। আর এসব কাজে সহযোগিতা করছে অর্থাৎ মাদক ব্যবসায়ীদের শেল্টারদাতা হিসেবে আছেন সমাজের বড় বড় রাঘব বোয়ালরা।
এমনকি তাদের কাছ থেকে মাসোহারা নিয়ে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে পুলিশ প্রশাসনও সহযোগিতা করে যাচ্ছে বলে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে অভিযোগ পাওয়া যায়। তাদেরকে আটক করে থানায় নিয়ে গিয়ে একটি নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয় বলেও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ হয়ে থাকে। ঈদকে সামনে রেখে দেশের প্রতিটি থানা এলাকাতেই মাদকের মজুদ গড়ে তুলছেন মাদক ব্যবসায়ীরা। মাদক বিক্রেতারা অল্পতেই টাকার কুমির হওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে মাদকের মজুদ গড়ে তুলছেন।
গাজীপুর-উত্তরা-বনানী-গুলশান-মিরপুর-ধানমন্ডি পুরান ঢাকা থেকে শুরু করে যাত্রাবাড়ী হয়ে চিটাগাং রোড, অন্যদিকে কেরানীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ হয়ে শ্রীপুর কাপাসিয়া বরমী প্রত্যন্ত মাদক অধ্যুষিত এলাকার মাদক ব্যবসায়ীরা প্রতিদিনই রাতের আধারে বিভিন্ন কায়দায় মাদকদ্রব্য এনে তা গুদামজাত করছে। আর প্রতিটি এলাকাতেই এ সকল মাদক ব্যবসায়ীদেরকে শেল্টার দিচ্ছেন স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী নেতা। হোক সেটা সরকারী দল কিংবা বিরোধী দল। হাজিগঞ্জ থেকে মহিলা আওয়ামীলীগ নেত্রী নুপুরকে ফেন্সিডিলসহ আটক করে ডিবি পুলিশ। গতকালও ফতুল্লা থানা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও বক্তাবলী ইউপি চেয়ারম্যানের ভাগিনাকে ফেন্সিডিল ও ইয়াবাসহ আটক করে থানা পুলিশ।
রাজধানীর তুরাগে এখন মাদকের আখড়া। খোদ তুরাগ থানার কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা এবং উত্তরার পূর্ব ও পশ্চিম থানার কয়েকজন এর আগে দক্ষিণখান-উত্তরখান ও খিলক্ষেতেও কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও মাদক ব্যবসা করার অভিযোগ উঠেছে। এদের মধ্যে কারোও কারোও বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। মিরপুর সহ গাবতলী হয়ে যাত্রাবাড়ী অন্যদিকে হাজিগঞ্জ কিংবা বক্তাবলীতেই নয়। ফতুল্লার প্রতিটি এলাকারই এ ধরনের নেতাদের শেল্টারেই এভাবে চলছে মাদক ব্যবসা। গাজীপুর থেকে আওয়ামীলীগের রানা সহ অনেককেই মাদক সহ গ্রেফতার করেছে পুলিশ। প্রতিদিন রাজধানীর সকল থানায় কাউকে না কাউকে মাদকের বিষয়ে গ্রেফতার করছে।
এ ব্যবসা এখন পুলিশের অনেক সদস্যরাও করছে বলে জানা যায়। পেশাদার মাদক ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি ভিন্ন ভিন্ন পেশার আদলে অনেকেই নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছেন মাদক ব্যবসা। সকল শ্রেনীর পেশাজীবী মহল থেকে শুরু করে জন প্রতিনিধি সহ প্রশাসনের প্রতিটি বিভাগের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তারা তার আশপাশ এলাকার মাদকের ভয়াবহতা সম্পর্কে অবগত থাকলে রহস্যজনক কারণে মাদক নির্মূলে পরিকল্পিত ভাবে তারা নিচ্ছেনা কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ। স্থানীয়দের অভিযোগ, মাদক প্রশাসনের নির্লিপ্ততার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা কোন প্রকার রাখ-ঢাক না রেখেই প্রকাশ্যে বিক্রি করছে সকল প্রকার মাদক। মাদক ব্যবসায়ীরা এতোটাই বেপোরোয়া হয়ে উঠেছে যে মাদক ব্যবসার আধিপত্য বা প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় জড়িয়ে পড়ছে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে।
স্থানীয়বাসীর দাবী, সরকার দলীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা, বিশেষ পেশায় জড়িত থাকা ব্যক্তিদ্বয়, প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তা এবং স্থানীয় মাদকাসক্ত পাতি নেতা ও হোমড়া-চোমরাদের যোগসাজশে বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে মাদকের বিশাল সিন্ডিকেট। মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারে প্রতিটি জেলার আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছে স্থানীয় এলাকাবাসী।
বিভিন্ন তথ্যে জানা যায়, মাদক সেবনকারীদের প্রায় ৮৫ শতাংশের বয়স ১৩ থেকে ২৯ বছর। তাদের একটি বিশাল অংশই মাদকদ্রব্য কেনার জন্য টাকা জোগাড় করতে বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। ডাকাতি, খুন, ছিনতাইসহ দেশে প্রতিনিয়ত যেসব অপরাধ ঘটে চলছে সেসবের একটি বড় অংশের পেছনেই রয়েছে মাদক। সুধী মহলের অভিযোগ, আমরা মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রতিশ্রুতি নিয়ে যতটা প্রচার করি তার শতকরা দশভাগও যদি বাস্তবে প্রয়োগ করি তাহলে নারায়ণগঞ্জে মাদকের বিস্তার রোধ করা অসম্ভব কিছু না। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, স্থানীয়ভাবে যারা এসব মাদক নির্মূল কমিটির প্রধান বা নেতা থাকেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারাই এই মাদক বিক্রির সিন্ডিকেটের রক্ষক হন।
বর্তমান সময়ে অধিকাংশ যুব সমাজকে মাদক-আক্রান্ত হয়ে ধ্বংসের অবলীলায় নিমজ্জ্বিত হতে দেখা যায়।
মাদকের সয়লাব ও সহজলভ্যতার কারণে যুবকরা কোনো না কোনো উপায়ে নেশাগ্রস্থ হয়ে পড়ছে। ঈদ উপলক্ষে মাদক ব্যবসায়ীদের মাদক মজুদ এবং যুবসমাজকে ধ্বংসের হাত থেকে বাচাঁতে মজুদকৃত মাদকসহ সকল মাদক ব্যবসায়ীদেরকে দ্রুত গ্রেফতারে সকল থানার অফিসার ইনচার্জের সদস্য হস্তক্ষেপ কামনা করছেন থানাধীন প্রতিটি পাড়া-মহল্লার সর্বস্তরের মানুষ।
এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়
Leave a Reply