মোঃ আশিকুর রহমান, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি ঃ স্থায়ী জলাবদ্ধতার কবলে সাতক্ষীরার তিন উপজেলার অন্তত ১৫০ গ্রাম। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় এসব গ্রামের কয়েক হাজার পরিবার শুস্ক মৌসুমেও পানি বন্দি হয়ে আছে। এ তিন উপজেলা হচ্ছে সাতক্ষীরা সদর, কলারোয়া এবং তালা। জলাবদ্ধতার শিকার গ্রামবাসিদের অভিযোগ নদীর স্লুইজ গেট বন্ধ রাখার পাশাপাশি অপরিকল্পিত ভাবে চিংড়ি ঘের করার করনে এই জলাবদ্ধতা। অন্যদিকে সরকারী হিসাব অনুযায়ী সাতক্ষীরার তিন উপজেলায় সাড়ে ১৪ হাজার হেক্টর জমি স্থায়ী ভাবে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা ও শহরের উপকন্ঠ গোপিনাথপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, চারিদিকে পানিবন্দি হয়ে আছে। কৃষি জমির পাশাপাশি বাড়িঘরও বৃষ্টির পানিতে ডুবে আছে। এ গ্রামের বাসিন্দা ইমান আলী জানান, গত বর্ষা মৌসমের পানিতে এখনো স্বপরিবারে বন্দি হয়ে আছি। বাড়ির চারি দিকে ৩ থেকে ৪ ফুট পানি জমে আছে। পরিবারের লোকজন নিয়ে বাড়িতে বসবাস করা খুবই মুশকিল হয়ে পড়েছে। মাঝে মধ্যে সাপের উপদ্রব দেখা দেয়। এতে করে ছেলে-মেয়েসহ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আতংতে থাকতে হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, ওই গ্রামের বিলের কৃষি জমিতে অপরিকল্পিত বেড়িবাধ দিয়ে মাছ চাষ করার ফলে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্দ হয়ে গেছে। ফলে গোপিনাথপুরসহ পার্শবর্তী বিনেরপোতা, তালতলতা, মাগুরা, খেজুরডাঙ্গি ও উত্তর কাটিয়ায় স্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। ইমান আলী আরো জানান, এ সমস্ত গ্রামকে জলাবব্দতা থেকে রক্ষা করতে হলে পার্শবর্তী বেতনা নদী খনন করা খুবই জরুরী। তিনি বলেন, গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বেতনা খননের নামে বিপুল পরিমান অর্থ ব্যয় করা হলেও তা কোনো কাজে আসেনি।
সাতক্ষীরা শহরের বদ্দিপুর গ্রামের বাসিন্দা শাহ্ আলম, আব্দুল গফুর এবং সাহাজদ্দীন সরদার জানান, তাদের এলাকার অধিকাংশ কৃষি জমিতে অবৈধ ভাবে বেড়িবাধ দিয়ে মাছ চাষ করার ফলে গত ৪/৫ বছর যাবত জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে অন্তত দেড় থেকে ২০০ পরিবার। শুধু এ গ্রামই নয় পার্শবর্তী মাছখোলা, হরিণখোলা, দামারপোতা, জেয়ালা, বড়দল, ও রামচন্দ্রপুর গ্রামেও একই ধরনের জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক অধ্যাপক মোঃ আনিসুর রহিম জানান, এ জেলায় জলাবদ্ধতা এখন ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। হাজার হাজার হেক্টর কৃষি জমি জলাবদ্ধতার কারনে ফমলহানি হচ্ছে। একই সাথে শুস্ক মৌসুমেও পানি বন্দি হয়ে থাকে জেলার হাজার হাজার পরিবার। তবে এই জলাবদ্ধতার অন্যতম কারন হিসেবে তিনি বলেন, জেলার অভ্যন্তরীন যে সব খাল রয়েছে তা দীর্ঘদিন খনন না করার পাশাপাশি অপরিকল্পিত ভাবে মৎস্য নির্মান করা। তিনি আরো বলেন, জেলার সব নদ-নদীর স্লুইজ গেটগুলো খুলে দিয়ে যদি খাল খনন করা যায় তাহলে এ জেলা থেকে জলাবদ্ধতা দুর করা সম্ভব হবে। তা না হলে আগামীতে আরো মারাত্মক আকার ধারন করবে জলাবদ্ধতা।
এদিকে জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যানুযায়ী সাতক্ষীরার তিন উপজেলাতে ১৪ হাজার ১৪৫ হেক্টর কৃষি জমি স্থায়ী ভাবে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এরমধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলাতে ৬ হাজার ১৫ হেক্টর, কলারোয়ায় ১ হাজার ৬৫ হেক্টর এবং তালা উপজেলাতে ৭ হাজার ৬৫ হেক্টর। সুত্রটি আরো জানায়, এ তিন উপজেলার প্রায় ১৫০ গ্রাম জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক আবুল কাসেম মোঃ মহিউদ্দিন জানান, এ জেলার মানুষের অন্যতম সমস্যা হচ্ছে জলাবদ্ধতা। এ সমস্যার সমাধান করতে হলে জেলার নদী বা খাল খননের কোনো বিকল্প নেই। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে খাল খননের মাধ্যমে যাতে পানি নিষ্কাশন ও জলাবদ্ধতা দুর করা যায়। তিনি আরো বলেন, শহরের মধ্যদিয়ে বয়ে যাওয়া প্রানসায়ের খাল, পার্শবর্তী বেতনা, মরিচ্চাপ ও বেত্রাবতী নদীর জোয়ার ভাটা না থাকার কারনেই আজ এই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়
Leave a Reply