মো: রাজন ইসলাম রাজু :
শীতকালে ভিন্ন মাত্রা এনে দেয় হরেক রকমের পিঠার ঘ্রাণ। পিঠাবিহীন শীতকাল যেন বেমানান। শীতের পিঠাপুলি বাঙালির ঐতিহ্যের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। বাংলার চিরায়ত লোকজ সংস্কৃতিতে পিঠা-পুলি-পায়েস বিশেষ স্থান দখল করে আছে। শীত এলেই বোঝা যায় পিঠা বাঙালির কতটা পছন্দের। এরই মধ্যে শীতকে সামনে রেখে সান্তাহারের প্রায় প্রতিটি ঘরে ঘরে বানানো শুরু হয়েছে নানান রকমের পিঠা।
শীতের একই পিঠা একেক অঞ্চলে একেক নামে পরিচিত। তেলের পিঠাকে উত্তরবঙ্গের অনেক এলাকায় বলে পাকান পিঠা। শতাধিক বা তারও বেশি রকমের পিঠা থাকলেও এখন ২৫ থেকে ৩০ ধরনের পিঠার প্রচলন রয়েছে। যেমন-ভাপা, নকশি, চিতই, রস, ডিম-চিতই, পাটিসাপটা, পাকান, হাঁড়ি, চাপড়ি, পাতা পিঠা, সুন্দরী পাকান, পুলি, পানতোয়া, মালাই, ক্ষীর কুলি, লবঙ্গ লতিকা, ঝাল পোয়া, তিল পিঠা, নারিকেল, সিদ্ধ পুলি, দুধ কুলি প্রভৃতি। আবার একেক ধরনের পিঠার দাম হয় একেক রকম।
শীতকালে বাড়িতে বাড়িতে হরেক রকমের পিঠা বানানোর ধুম পড়ে যায়। প্রতিদিন ভোর বা সন্ধ্যায় নারীরা দুধ পুলি, ভাবা,তলপিঠা, পাটিসাপটাসহ বিভিন্ন পিঠা তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এ সময় আত্মীয়স্বজনরা বেড়াতে আসলে তাঁদের পিঠা দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। তবে ঘরের দরজা পেরিয়ে পিঠার বিচরণ এখন হাট-বাজারেও বেড়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সান্তাহারের বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার পাশে ভ্রাম্যমাণ পিঠার দোকান বসেছে। এসব দোকানে শীতের পিঠা বিক্রি করেন মৌসুমি বিক্রেতারা। সান্তাহারের পৌর শহরের রেলগেট এলাকায়, স্টেশন চত্বর, নতুন বাজার হাট, রথবাড়ি রোড সহ বিভিন্ন মহল্লার প্রায় প্রতিটি অলিগলিতে চোখে পড়ে অস্থায়ী পিঠার দোকান। এসব দোকানে পিঠা বিক্রি করে বিক্রেতারা জীবিকা নির্বাহ করেন। দোকানগুলোতে চিতই,তেল পিঠা, পাটিসাপটা পিঠা, সাত কুপি পিঠা,ভাপা পিঠা, ডাল পিঠা ,ডিম পিঠা, কুশলী পিঠা, বিক্রি করা হয়। চালের গুঁড়া, নারিকেল আর খেজুরের গুড় দিয়ে ভাপা পিঠা বানানো হয়। একপাশে গোলাকার ভাপা পিঠা বানানো হচ্ছে। অপরদিকে, চালের আটা পানিতে মিশিয়ে মাটির খোলায় তৈরি করা হচ্ছে চিতই পিঠা।
রেল গেট এলাকায় পিঠা বিক্রেতা তনু বলেন, প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত তার পিঠার হোটেলে হরেক রকমের মজাদার পিঠা বানায় যা সান্তাহার সহ আশেপাশের নওগাঁ ,রানীনগর, তিলকপুর, আদমদীঘি এলাকার লোকজন পিঠা খেতে আসেন এবং পরিবারের সদস্যদের জন্য পার্সেল নিয়ে যান। গত বছরের দামেই এবার পিঠা বিক্রি করছি।
নওগাঁ থেকে পিঠা খেতে আসা সাথী, সাবু এবং সাগর শাহ বলেন, সাধারণত শীত মৌসুম আসলেই পিঠার স্বাদই আলাদা মনে হয়। সকাল ও বিকেলের নাশতা হিসেবে পিঠা বেশ ভালো লাগে। শীতকালে প্রায়ই সান্তাহারে পিঠা খেতে আসা হয়।
এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়
Leave a Reply