মোর্শেদ আলী মারুফ :
সাভারে ডাক্তার না হয়েও রোগীদেরকে প্রতারিত করে নামের পাশে ডাক্তার লিখে চিকিৎসা সেবা প্রদান করছেন নজরুল ইসলাম নামের এক ব্যাক্তি। তার কাছে নেই কোনো বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) সনদ।
তবুও তিনি দীর্ঘ এক বছর যাবৎ সাভার থানা রোড টেস্টি ট্রিট এর তৃতীয় তলায় একটি ফ্লোর ভাড়া নিয়ে ‘আমেনা পাইলস কেয়ার’ নাম দিয়ে পাইলস চিকিৎসা করে আসচ্ছেন। কাগজে কলমে থাকলেও সেই ভবনে তার প্রতিষ্ঠানের কোন ব্যানার নেই। তবে সাভারের অলিতে গলিতে ছোট ছোট ফ্যাস্টুন দেওয়া হয়েছে।
সম্প্রতি তার হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে, তিনি নিজে রোগীদের প্রেসক্রিপশন করছেন ও রোগী দেখছেন। ডাক্তার পরিচয় দেওয়া নজরুলের সিলমোহরে লিখা রয়েছে ডাঃ নজরুল ইসলাম ‘ডিপ্লোমা ইন মেডিসিন এন্ড সার্জারি’ ও এক্সপেরিয়েন্স পাইলস ফিজিশিয়ান। এছাড়া তার ছিল ও স্বাক্ষরিত প্রেসক্রিপশন দেখা গেছে।
ভুল চিকিৎসা দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আমেনা পাইলস কেয়ারের মালিক নজরুলের বিরুদ্ধে। সাভারের বাসিন্দা সম্ভু ঘোষ নামের এক ব্যক্তির পাইলসের চিকিৎসার জন্য নজরুলের কাছে এসেছিলেন। ৩০ হাজার টাকার কন্ট্রাকে চিকিৎসা নিবেন তিনি। চিকিৎসা শেষে তার রোগতো ভালো হয়নি বরংচ আর বেড়ে গেছে।
সম্ভু ঘোষের ভাগীনা শাউন শাহ বলেন, আমার খালু সম্ভ ঘোষের পায়ু পথে গুটি টাইপের একটা কিছু হয়েছিলো। সেটার চিকিৎসার জন্য ‘আমেনা পাইলস কেয়ারের পোষ্টার দেখে যোগাযোগ করেন। সেখানে ডাক্তার নজরুল সাথে পরে ৩০ হাজার টাকার কন্ট্রাকে ঈদের আগে চিকিৎসা নেন। সেখানে নজরুল বলেন সম্ভুর যা যা সমস্যা সব সমাধান করে দিবে৷ যদি সমস্যা সমাধান না হয় তিনি যতবার আসবেন ততবারই ফ্রি চিকিৎসা দিতে পারবেন। চিকিৎসা নেওয়ার পর আছতে আছতে ফিস্টুনটি আরো বড় হতে থাকে সাথে ব্যথাও বাড়তে থাকে। পরে কোনো কুল না পেয়ে পাইলস বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এটি এম ফজলুল হকের কাছে চিকিৎসা নিতে এই মাসেই যাই। উনি যখন ডাক্তার নজরুলের প্রেসকিপশন দেখ তখন অবাক হয়ে যায়। পরে ডাক্তার ফজলুল হক সাহেব আমাদের বলে রোগীর আরও ক্ষতি হয়েছে আগের চিকিৎসায়। এখন আমার খালুর অপারেশন হয়েছে মোটামুটি ভালো অনুভব করছেন তিনি।
এ সব বিষয়ে নজরুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি আসলে ড্রেসিংগুলো করি। আমি ডিপ্লোমা কোর্স করেছি রোগী দেখে অপারেশন দ্বারা চিকিৎসা দেই।
আপনি কি ডাক্তার? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমার বিএমডিসির সনদ নাই। আমি ডাক্তারের সহকারী। আমার এখানে ডাক্তার বসেন। আমি ডাক্তার না। তবে আমার ডিপ্লোমার সার্টিফিকেট আছে৷
আপনি কি ডিপ্লোমা সার্টিফিকেট দিয়ে রোগী দেখতে পারেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এরকম বাংলাদেশে অহরহ অহরহ রয়েছে। আমার প্রেসক্রিপশনে কোন নাম নেই।
নজরুল ইসলামের পাইলস কেয়ারের সকল তথ্য গত রোববার (২৮ আগস্ট) বিকালে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ সায়েমুল হুদাকে বিস্তারিত জানানো হলে তাৎক্ষণিকভাবে সেই কেয়ারের বিষয়ে তদন্ত করে কোন অসংগতি পেলে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
সোমবার বেলা ১২ টার দিকে পুলিশ প্রশাসনসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তাদের নিয়ে সেই পাইলস কেয়ারে গিয়ে অভিযান পরিচালনা করে অসংগতি পেয়ে সিলগালা করে দেন ডা. মোহাম্মদ সায়েমুল হুদা।
এ বিষয়ে ডা. মোহাম্মদ সায়েমুল হুদা বলেন, সুনির্দিষ্ট কিছু তথ্যের ভিত্তিতে আজ এই কেয়ারে আমরা আসি। এখানে নামের পূর্বে ডাক্তার লিখছে যে নাকি চিকিৎসক নয়। এছাড়া পাইলস কেয়ারটির বৈধ কাগজ পত্র দেখাতে বলেছি তারা কোনো কাগজ পত্র আমাদের দেখাতে পারেনি। তাই প্রতিষ্ঠানটি আমরা সিলগালা করে দিয়েছি।
এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়
Leave a Reply