মোর্শেদ আলী মারুফ :
সম্প্রতি সুনামগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জে হাওড়ে হঠাৎ পানিতে তলিয়ে গেছে হাজার হাজার বিঘা জমির ধান। বাধ্য হয়েই কাঁচা ও আধাপাকা ধান কেটে নিয়ে যেতে দেখা গেছে কৃষকদের। ঢাকার সাভার শিল্পাঞ্চলেও দেখা মিলেছে এমন চিত্র। হঠাৎ উজানের পানিতে দুই শতাধিক হেক্টর জমির বোরো ধান ফসল তলিয়ে গেছে। কাঁচা অবস্থায় সেসব ধান কেটে নিয়ে যাচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্ত অনেক কৃষক।
আজ শনিবার (২৩ এপ্রিল) ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল ধামসোনা ইউনিয়নের সুবন্দি নামাপাড়া এলাকায় গিয়ে এই চিত্র দেখা যায়।
এছাড়া আমিনবাজার, কাউন্দিয়া, আশুলিয়া ও ইয়ারপুর ইউনিয়নের কৃষিজমির ধান তলিয়ে গেছে।
উপজেলা কৃষি অফিস জানিয়েছে, সাভার শিল্পাঞ্চল হলেও মোট আবাদি জমির পরিমান ১৩ হাজার ৫৮৫ হেক্টর। এর মধ্যে ৮ হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করেন কৃষকরা। যার মধ্যে ২৫০ হেক্টরের বেশি জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানান, সুবন্দি ও শ্রীপুরসহ আশপাশের এলাকার প্রায় এক হাজার কৃষক এক ফসলি নিচু জমি গুলো বছরের পর বছর ধরে ধান চাষ করে আসছেন। প্রায় তিন-চার কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এসব জমিতে এবছর তারা ধান চাষ করেছেন। কিন্তু চৈত্র মাসে অসময়ে আসা উজানের পানিতে তাদের সমস্ত ফসল পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এতে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা।
সুবন্দি এলাকায় পানির কারণে আধাপাকা ধান কেটে এনে মারাই করতে দেখা যায় কৃষক সুরুজ মিয়াকে। চার পাকি জমির সব ধানের গাছ পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় চোখেমুখে তার বিষাদের ছাপ।
সুরুজ মিয়া বলেন, ‘প্রায় ৮০ হাজার টাকা খরচ করে ৪ বিঘা) জমিতে ২৮ ধান রোপন করেছিলাম। আর ১৫-২০ দিন গেলেই ধান পেকে যেতো। কিন্তু হঠাৎ উজানের পানি এসে নিচু জমিতে ঢুকে পড়েছে। আমার পুরা জমি ডুবে গেছো। আজ কোনরকমে দেড় বিঘা জমির ধান তুলে আধাপাকাই কেটে ফেললাম। পরে সেই ধান মারাই করেছি। এমনিতেইতো সব শেষ হইয়া গেছে তার উপর শ্রমিক খরচ দিয়া আবার কাঁচা ধান কেটে আনতে হচ্ছে।’
আব্বাস আলী নামে আরেক কৃষক বলেন, ‘দুই বিঘা জমিতে ধান রোপন করেছিলাম। এই চৌত্র মাসেই কই থেকে পানি আসলো। সব তলিয়ে গেলো। কোনমতে শ্রমিক নিয়ে আধাপাকা ধান কাটলাম। আরেক বিঘা জমির সব ধান পানির নিচে চলে গেছিল। সেটা কাটতেই ৫ হাজার টাকা খরচ। কই থেকে কীভাবে পানি এলো কেই বলতে পারছে না। চৌত্র মাসে আমরাও কখনো পানি দেখিনি, মুরুব্বিরাও দেখেনি কখনো। সন্ধ্যার পর জোয়ার আসে। তখন ধান পানির তলে। দিনের বেলা পানি কমলে কোনমতে ধান দেখা যায়। এখানকার অনেকেই এভাবে ক্ষতির শিকার হয়েছে।
সাভার উপজেলা কৃষি অফিসার নাজিয়াত আহমেদ বলেন, ‘হঠাৎ জোয়ারের পানি তুরাগ নদ দিয়ে এসে আমিনবাজার, কাউন্দিয়া, আশুলিয়া, ধামসোনা ও ইয়ারপুর ইউনিয়নের কিছু অংশ পানিতে তলিয়ে গেছে। ধানটা এমন অবস্থায় আছে যে এখনও কাটার মতো অবস্থা হয়নি। তার আগেই পানিতে তলিয়ে গেছে। ২৫০ হেক্টরের বেশি জমির ধান পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’
করণীয় কি এমন প্রশ্নে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আসলে আমরা দেখতেছি যে এরকম জোয়ারের পানি নরমালি আসে না। এই পানিটা জৈষ্ঠ মাসের দিকে আরও পরে আসে। কিন্তু এবার পানিটা অনেক আরলি (আগে) চলে আসছে। যে কারণে ধানের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। জোয়ারের পানিটা আমিনবাজার ও কাউন্দিয়া বিস্তীর্ণ এলাকা দিয়ে এমন ভাবে আসে যে এটাকে বাধ দিয়ে আটকানো সম্ভব না। তবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের কিভাবে সহযোগিতা করা যায় সেটা আমরা দেখব।