রবিউল আলম রাজু :
সারাবিশ্ব আজ করোনা মহামারীতে স্তব্ধ। বাংলাদেশও করোনা মহামারীতে গত ২৬ মার্চ থেকে লকডাউন শুরু হয়ে গত ৩১ মে রবিবার সরকারী সাধারণ ছুটি শেষ হয়। কর্মস্থলে যোগদানে সকলকে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতে সরকারী নির্দেশনা দেওয়া হয়। তুরাগ তীরে বিআইডব্লিউটিএ নদী দখল মুক্ত সীমানা পিলার স্থাপনের কাজ শুরু হয়। নদীর সীমানা পিলার স্থাপনের কাজটি ঠিকাদার কোম্পানী ইস্টার্ন হাউজিং লিঃ করে যাচ্ছে। সাধারণ ছুটি শেষে এই ঠিকাদার কোম্পানীটি তুরাগ তীরে তাদের নিয়মিত কাজ শুরু করেছে। নদীর তীরে সীমানা পিলারের পাইলিং কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এখন শুধু পিলার দাঁড়ানো কাজ চলছে। তুরাগ পাড়ে পিলার স্থাপন অনিয়মের অভিযোগ তুলে অ্যাগ্রো ভিটা কোম্পানী লিঃ। কোম্পানীটির অভিযোগ হাইকোর্টের নির্দেশনা উপেক্ষা করে তারা আজও আমাদের জায়গায় কাজ করতে আসে। পরবর্তীতে আমরা অনুরোধ করলে তারা কাজ বন্ধ রেখে অন্যত্র কাজ শুরু করে।
তুরাগ নদীর পাশ দখল মুক্ত করতে উচ্ছেদ অভিযান করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। গত বছর তুরাগপাড়ে এই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। উচ্ছেদ অভিযানে কয়েক হাজার বাড়ী-ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান উচ্ছেদ করা হয়। উচ্ছেদ অভিযান শেষে নদীর সীমানায় পিলার স্থাপনের কাজ শুরু করে (বিআইডব্লিউটিএ)। বিআইডব্লিটিএ’র এই উচ্ছেদকে স্বাগত জানালেও সংশ্লিষ্ট দপ্তর অজানা রহস্যে অনেকাংশে নিয়ম বহিঃর্ভূত কাজ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিআইডব্লিউটিএ’র সীমানা নির্ধারণ কর্মকর্তারা অনেক জমির মালিকের নিকট হইতে বিশেষ সুবিধা পেয়ে পিলার বাড়িয়ে কমিয়ে বসিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই বিষয় নিয়ে ইলেকট্রিক মিডিয়ায় বেশ কয়েকটি সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। মহামান্য হাইকোর্টের আদেশকে তোয়াক্কা না করে সিএস মূলে ক্রয়কৃত জমি বিআইডব্লিউটিএ’র সম্পত্তি বলে জোরপূর্বক স্থাপনা ভেঙ্গে দেয়। জমির কাগজপত্র দেখাতে চাইলে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয় বিগত সময়ে।
নদীর সীমানায় পিলার স্থাপনে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তার উপর। তুরাগ তীরের কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি মালিকানা সম্পত্তি অবৈধভাবে উচ্ছেদের অভিযোগ উঠেছে বিআইডব্লিউটিএ’র উপর। তুরাগ তীরে অবস্থিত অ্যাগ্রো ভিটা লিমিটেড কোম্পানী বিগত ২২/০১/২০২০ ইং তারিখে মহামান্য হাইকোর্টে পূর্বেই রিটপিটিশন করার আবেদনের রায় পায়।
যেখানে মহামান্য হাইকোর্টের আদেশে বলা হয় অত্র জমিতে নদীর সীমানা নির্ধারণের জন্য যৌথ সার্ভে আইন বহিঃর্ভূত কার্যকলাপের জন্য বিআইডব্লিউটিএ’র বিরুদ্ধে ক্যাপ্টেন এম মোয়াজ্জেম হোসেন কর্তৃক মহামান্য সুপ্রীম কোর্ট অব বাংলাদেশ রিটপিটিশন নং- ৩৮৬৭/২০১৫ চলমান রহিয়াছে। উক্ত রিটপিটিশন হইতে নং ৩৮৬৭/২০১৫ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আবেদনকারীর মালিকানাধীন ভূমিতে আইন বহিঃর্ভূত কার্যকলাপ ও উচ্ছেদ না হওয়া পর্যন্ত আবেদনকারীর মালিকানাধীন ভূমিতে আইন বহিঃর্ভূত কার্যকলাপ ও উচ্ছেদ সহ কোন প্রকার হস্তক্ষেপমূলক কার্যক্রম হইতে বিরত থাকা ও উভয়পক্ষকে শান্তিপূর্ণ সহ অবস্থান বজায় রাখার জন্য আদেশ প্রদান করা হইয়াছে।
উল্লেখ্য করোনা মহামারীতে সারাবিশ^ আছে লকডাউনে। বাংলাদেশেও গত ২৬ মার্চ থেকে লকডাউন চলমান আছে। এ অবস্থায় জরুরী পরিষেবা দপ্তর ছাড়া সব দপ্তরই সাধারণ ছুটির আওতায় আছে। লকডাউনকে উপেক্ষা করে বিআইডব্লিউটিএ নদীর সীমানা পিলার স্থাপনের কার্যক্রম চলমান রেখেছে।
এ ব্যাপারে অ্যাগ্রো ভিটা কোম্পানী’র চেয়ারম্যান এম মোয়াজ্জেম হোসেন প্রাণের বাংলাদেশ বলেন, বিআইডব্লিউটিএ’র যুগ্ম পরিচালক আরিফ সাহেব তার মনগড়া ভাবে নদীর সীমানায় পিলার স্থাপন করছেন। কারো জমি শেষ সীমানা ঘেষে, কারো জমি শুরুতে সম্পূর্ণ জমিটি নিয়ে সীমানা পিলার স্থাপন করে আসছেন তিনি। টাকার বিনিময়ে জমির মালিককে সুবিধা দিয়ে থাকেন তিনি। তিনি আরো বলেন, আরিফ সাহেবের লোকজন আমার কোম্পানীর ল্যান্ড অফিসার শহিদুল্লাহ্র কাছ থেকে ২৫ লক্ষ টাকা দাবী করে। না দিতে অস্বীকার করায় শত্রুতার জেরে আমার সম্পন্ন জমিটি নিয়ে পিলার স্থাপন করেন তিনি। মহামান্য হাইকোর্টের রায় থাকা সত্বেও আইনকে অবজ্ঞা করে কোন এক শক্তির বলে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউএ’র যুগ্ম পরিচালক আরিফ সাহেবের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তাকে পাওয়া যায়নি।
পিলার স্থাপনে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটির ইঞ্জিঃ আব্দুল্লাহ্ আল মামুন বলেন, উপরের নির্দেশেই আমরা কাজ চালাচ্ছি। আপনারা তাদের সাথে কথা বলেন, তাদের নির্দেশে আমরা কার্যক্রম বন্ধ করবো।
এরকম একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে ইতিপূর্বে বিআডিব্লিউটিএ’কে নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। অ্যাগ্রো ভিটা কোম্পানী লিমিটেড’র ল্যান্ড অফিসার শহিদুল্লাহ্ বলেন, আমাদের কোম্পানীর জায়গা রেখে নদীর সীমানা পিলার বসানোর জন্য আমার কাছে ২৫ লক্ষ টাকা চাওয়া হয়েছিল এবং বর্তমানে টাকার অংক বাড়িয়ে দিলে পিলার গুলো সরিয়ে জমির শেষ অংশে নিয়ে যাবেন বলে জানান বিআইডব্লিউটিএ’র কিছু লোকজন। উল্লেখ্য কোম্পানীটি ২১০.০০ শতাংশ জমি (বাপাউবো) কাছ থেকে ১৯৯৯-২০০১ সিএস মূলে ক্রয় করে ।
প্রকল্পের যাতায়াতের সুবিধার জন্য ০৩-১১-২০০৯ সালে ২১.২০ শতক প্রায় এবং ৩০-০৬-২০১১ সালে ৩২.৬৬ শতক প্রায় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো) প্রকল্প সংযোগ সড়ক হিসাবে অনুমতি প্রধান করেন। প্রকল্পটিতে প্রায় দুই হাজার গাছ ছিল। গত ১০ এপ্রিল হঠাৎ অ্যাগ্রো ভিটা লিমিটেডের উপর উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। এতে নেতৃত্ব দেন বিআইডব্লিউটি এর যুগ্ম-পরিচালক ও ঢাকা নদী বন্দর নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা একেএম আরিফ উদ্দিন এবং নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমান। অভিযানে অবৈধভাবে স্থাপনা সহ প্রায় দুই হাজার গাছ নষ্ট করে দেয়া হয়।
গাছ পরিবেশের সৌন্দর্য বাড়ায়। নদীর দু-পারে স্বাস্থ্য ফিরিয়ে আনতে এই উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। আর নদীর দু-পাড়ে স্বাস্থ্য ফিরিয়ে আনতে গাছ অপরিসীম ভূমিকা পালন করে। অথচ একেএম আরিফ উদ্দিনের নেতৃত্বে অ্যাগ্রো ভিটা লিমিটেডের দুই হাজার গাছ গুড়িয়ে দেয়া হয়। এতে কোম্পানীর প্রায় দুই কোটি টাকা ক্ষতি হয়। হাইকোর্টের রিটপিটিশনকে তোয়াক্কা না করে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত থাকবে তবে আদালতের হস্তক্ষেপ থাকলে সেটা আলাদা বিষয়। এ ব্যাপারে প্রকল্পের একজন কর্মকর্তার সাথে কথা বললে তিনি জানান, আমাদের কোন কথায় তারা শুনেননি, কথা বলতে গেলে গ্রেফতার করার হুমকি দেয়।
ওই সময় স্থানীয়দের মধ্যে বেশ কয়েকজন অবৈধ স্থাপনার সঙ্গে বৈধ স্থাপনা ভাঙ্গা পড়েছে বলে দাবী ওঠে ভুক্তভোগীদের। জানা গেছে ২০১৬ সালে একনেকের বৈঠকে ঢাকার চারপাশের নদী ও চট্টগ্রামের কর্ণফুলি নদীর দূষণ বন্ধ ও নব্যতা ফিরিয়ে এনে নদী রক্ষায় টাস্কফোর্স গঠন করে দেয় প্রধানমন্ত্রী শেক হাসিনা। তারই ধারাবাহিকতায় চালানো হয়েছে এই উচ্ছেদ অভিযান। কিন্তু এই উচ্ছেদ অভিযানের নামে আদালতকে অবজ্ঞা করা এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন সম্পত্তি যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসীরা।
এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়
Leave a Reply