রবিউল আলম রাজু :
সুন্দর চাকচিক্য অফিসের মধ্যে শ’খানেক ল্যাপটপ দিয়ে কলেজ পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদেরকে দিয়ে চালানো হচ্ছে কল সেন্টার। অ্যাপসকে কেন্দ্র করে লোনের ফাঁদ পেতে বিশেষ ভাবে চায়না নাগরিকরা এই ব্যবসাটি পরিচালনা করছে। কেউ তাদের অ্যাপস ডাউনলোড দিলেই সকল তথ্য চলে যায় তাদের হাতে। এসব সেন্টারের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। তারা ফেসবুক থেকে বিভিন্ন আইডি সংগ্রহ করে আইডি পরিচালনাকারীদেরকে বিভিন্ন লোনের আকর্ষণ দেখিয়ে সুকৌশলে হাতিয়ে নিচ্ছে তথ্য। অতঃপর বিভিন্ন পর্ণ ছবির সাথে এডিট করে ব্ল্যাক মেইলিং করে হাতিয়ে নিচ্ছে অবৈধভাবে অর্থ সম্পদ।
এসব কল সেন্টার গুলো পরিচালনা করছে চায়না সহ বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা। এদের সাথে আবার কিছু টিম লিডার হিসেবে কাজ করছে চতুর বাঙ্গালিরা। তাদেরকে ৮০-৯০ হাজার টাকা বেতন দেওয়া হয়। এসব কল সেন্টারের বিরুদ্ধে নিবিড় পর্যবেক্ষণ করে প্রকৃত ভাবে এরা কিসের ব্যবসা করে বিষয়টি জানা অতীব জরুরী।
নাম না জানাতে ইচ্ছুক এসব ব্যবসার সাথে জড়িত কয়েকজন দৈনিক আমার প্রাণের বাংলাদেশকে জানান, বাংলাদেশ পুলিশের বেশ কিছু অসাধু বড় কর্মকর্তারা এদের অবৈধ ব্যবসার পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে আসছে। কোন সাংবাদিক এসব কল সেন্টারের সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে তাদেরকে বিভিন্ন হেয় প্রতিপন্ন করে এসব কোম্পানী থেকে উল্টো মিথ্যা অভিযোগ তুলে জানায়, আমাদের মোবাইল ও ল্যাপটপ চুরি হয়েছে। এভাবেই মিথ্যা নাটক সাজিয়ে প্রকৃত ঘটনাকে আড়াল করার চেষ্টা করে এসব কোম্পানীর নিয়ন্ত্রণকারী ব্যক্তিরা। রাজধানীর উত্তরা সহ খিলক্ষেত, মিরপুর ও অন্যান্য আবাসিক এলাকায় কল সেন্টারের ব্যবসা এখন জমজমাট। উঠতি বয়সি মেয়েরা
এসব ব্যবসায় হুমরি খেয়ে পড়ছে। তারাও অনেকে জানেনা কম্পিউটারে তারা কি কল সেন্টারের নামে কি কাজ করছে। তাদের তৈরি সিস্টেমের মধ্যে সবাইকে রেখে অ্যাপসের মাধ্যমে দেশের বাহির থেকে বিশেষ করে ভারত ও পাকিস্তান এই ব্যবসাটি নিয়ন্ত্রণ করছে বলে জানা যায়। অন্যদিকে সুনির্দিষ্ট নীতিমালার মাধ্যমে বেসরকারি সিকিউরিটি কোম্পানিগুলোকে একটি নীতিমালার মধ্যে আনার প্রচেষ্টা সরকার চালালেও বেশিরভাগ সিকিউরিটি কোম্পানি এর কোন তোয়াক্কা না করেই তাদের ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। নেয়া হচ্ছে না পুলিশ ভেরিফিকেশনের কোন ছাড়পত্র। এছাড়াও বেসরকারি সিকিউরিটি কোম্পানি খোলার ক্ষেত্রে লাইসেন্স ইস্যু করতে জেলার ক্ষেত্রে জেলা ভিত্তিক জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং মেট্রোপলিটন এলাকার ক্ষেত্রে পুলিশ কমিশনারের ক্ষমতাপ্রাপ্ত হওয়ার কথা থাকলেও অধিকাংশ কোম্পানিগুলো তা না করে ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে তুলছে সিকিউরিটি কোম্পানির আড়ালে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম ও অপরাধের চক্র। রাজধানী উত্তরার দক্ষিণখানে ট্রান্সমিটার নামক এলাকা ও ৯ নং সেক্টর সোনারগাঁও জনপথ রোডের একটি ভবনে সিকিউরিটি কোম্পানির আড়ালে লোভনীয় অফারে অভিনব এমএলএম ব্যবসার মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়া এরকম দুটি প্রতিষ্ঠানের সন্ধান মিলেছে।
জানা যায়, র্যাপিড সেইফ সিকিউরিটির এমডি স্বপন ও সুপার স্মার্ট সিকিউরিটির চেয়ারম্যান আরজু খানের পরিচালনায় দীর্ঘদিন যাবত সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠান দুটি। সরেজমিনে গিয়ে আরো জানা যায়, চাকুরি প্রত্যাশীদের কাছ থেকে চাকরির শ্রেণীবিভাগ অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের জামানত গ্রহণ করা হয়ে থাকে। প্রতিটি সদস্যদের কাছ থেকে বাধ্যতামূলক ভর্তি ফি ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা সহ সদস্যের লেভেল অনুযায়ী ৩ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১৫-৩০ হাজার টাকা নিয়ে থাকে প্রতিষ্ঠান দুটি। এছাড়াও ১৫-৩০ হাজার টাকা জামানত দেয়া মার্কেটিং অফিসারদের দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে লোভনীয় বেতনের অফারে বিজ্ঞাপন দেয়া হয়। আর এসব মার্কেটিং অফিসাররা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে যত বেশি লোকবল সংগ্রহ করে টাকা নিতে পারবে তার তত বেশি কমিশন দেয়া হবে বলে প্রভাবিত করা হয়ে থাকে। অথচ এসব মার্কেটিং অফিসারদের নিজেদের অনেকেরই নেই কোম্পানির কোন আইডি কার্ড। নেই কোন ট্রেনিং এর ব্যবস্থা। এমনকি কোম্পানি কোথায় কোথায় সিকিউরিটি গার্ড নিয়োগ দিয়েছে তারও কোন সদুত্তর দিতে পারেনি তারা।
এছাড়াও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের ছবি টাঙিয়ে এবং স্থানীয় কাউন্সিলর ও ছাত্রলীগের এক নেতার নাম ব্যবহার করে দিনের পর দিন সাধারণ মানুষের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতে নিচ্ছে প্রতিষ্ঠান দুটি। আরো জানা যায়, কিছুদিন আগে র্যাব ৪ এর অভিযানে বি এলার্ট নামক সিকিউরিটি কোম্পানির বেশ কিছু অসাধু কর্মকর্তা আটক হয়। পরবর্তীতে তারা জামিনে বের হয়ে আলাদা আলাদা নামে এইসব সিকিউরিটি কোম্পানির সৃষ্টি করে। এমনকি র্যার ৪ এর অভিযানে আটক হওয়া কতিপয় ব্যক্তি প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বিভিন্ন ধরনের বাজে মন্তব্য করা সহ প্রতিবেদনটি না করার জন্য প্রতিবেদককে বিভিন্ন উপায়ে ম্যানেজ করার চেষ্টা করে।
এ ব্যাপারে ঢাকা উত্তরা জোনের ডিসি মোরশেদ আলম প্রতিবেদককে বলেন, কিছুদিন আগে এরকম একটি সিকিউরিটি কোম্পানির নামে উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা হয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য কোম্পানিগুলোর ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট তথ্য এবং অভিযোগ পেলে সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এই সাইটের কোন লেখা কপি পেস্ট করা আইনত দন্ডনীয়
Leave a Reply